পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক।
Published : 18 Apr 2013, 04:12 AM
বুধবার বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পদ্মা প্রকল্পে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতার ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছে এসএনসি-লাভালিন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের মধ্যেই কম্বোডিয়ায় পল্লী বিদ্যুতায়নের একটি প্রকল্পে
এসএনসি লাভালিনের দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্ব ব্যাংকের কাছে আসে।
তবে প্রতিষ্ঠানটি সমঝোতা অনুযায়ী সব শর্ত অনুসরণ করলে আট বছর পর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
বিশ্বব্যংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট লিওনার্ড ম্যাকার্থি বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরপরই আমরা বিষয়টি রয়্যাল কানাডীয় পুলিশকে জানিয়েছি। দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঝুঁকি কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি এসএনসি-লাভালিন বিশ্ব ব্যাংককে দিয়েছে, তা তারা নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করবে বলেই আমি আশা করি।”
পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতি অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত জানুয়ারির শেষে বাংলাদেশ সরকার তাদের ‘না’ করে দেয়।
এই প্রকল্পের কাজ পেতে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ঘুষ সাধার অভিযোগে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহের বিচার চলছে কানাডায়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কানাডায় এসএনসি-লাভালিন কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ।
বিশ্ব ব্যাংক অভিযোগ আনার পর দুর্নীতি দমন কমিশন রাজধানীর বনানী থানায় সাত জনকে আসামি করে যে মামলা করেছে, তাতেও আসামি করা হয়েছে ওই দুই জনকে।
এই মামলায় সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌস ছাড়াও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা এবং এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেসকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পারস্পারিক যোগসাজসে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ এর অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এসএনসি লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ‘ঘুষ লেনদেন ’সম্পন্ন হতো।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের জন্য ড. জামিলুর রেজার নেতৃত্বাধীন মূল্যায়ন কমিটি পাঁচটি কোম্পানির নাম তালিকায় রেখেছিল। এই পাঁচ কোম্পানির প্রথমটি ছিল এসএনসি-লাভালিন।
বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ ও কানডীয় পুলিশের তদন্তের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে রমেশ শাহর একটি ডায়েরি, যাতে ‘সম্ভাব্য ঘুষ বণ্টনের’ একটি তালিকা রয়েছে।
ওই তালিকায় অন্য অনেকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মশিউর রহমান এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নামও রয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
ওই ডায়রির তথ্যের ভিত্তিতে গত বছর শেষ দিকে বাংলাদেশ সরকারকে একটি প্রতিবেদনও পাঠায় বিশ্ব ব্যাংক।
সরকার পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
মালয়শিয়া সরকার ও চীনের একটি কনসোর্টিয়াম পদ্মা প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দিলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হবে।