সঞ্চয়পত্রে চাপ কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

সামাজিক সুরক্ষার কৌশল হিসেবে উচ্চমূল্যের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বাজেট ঘাটতি মেটানোর চর্চা থেকে সরে বিকল্প উপায় বের করতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 08:10 AM
Updated : 12 June 2017, 08:39 AM

সম্প্রতি প্রকাশিত আর্টিকেল ফোর মিশনের বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং বিধি প্রণয়নের চর্চা ও প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার আনতে হবে। সেক্ষেত্রে দেশের অব্যবহৃত ব্যাপক সঞ্চয়ের সুযোগ ব্যবহার করে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

“সরকারি বাজেটে অর্থায়নের উৎস হিসেবে উচ্চ ব্যয়ের জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কমিয়ে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।

অর্থবাজারের যাতে ক্ষতি না হয় এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষার কৌশলও যাতে অর্জিত হয়, সেভাবে ‘উন্নততর লক্ষ্যাভিমুখী ও স্বল্প ব্যয়ের বিকল্প’ বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

গত মার্চে দুই সপ্তাহের ঢাকা সফর শেষে ব্রায়ান এইটকেনের নেতৃত্বে আইএমফ মিশনের পর্যালোচনার ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমএফ।

মিশনের পর্যালোচনায় বলা হয়,  উচ্চ সুদের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ  নিয়ে বাজেট  ঘাটতি মেটানোর বিষয়টি আর্থিক খাতের আধুনিকায়নে পথে বড় বাধা।

ব্যাংক আমানতের সুদের হারের সঙ্গে ব্যবধানে নামিয়ে আনতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দুই মাসের মধ্যে কমানো হবে বলে কয়েক দিন আগেই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মতো।

বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমিয়েছিল সরকার। দুই বছর পর আরেক দফা কমানো হচ্ছে।

সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “আমাদের এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আসলেই বেশি। সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের হারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১-২ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ব্যবধান ৪ শতাংশের বেশি।

জ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনতে জাতীয় সঞ্চয়পত্র স্কিম চালু করা হয়।

সঞ্চয়ের মাধ্যমে এসব মানুষকে সুবিধা দিতে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ব্যাংক হারের চেয়ে বেশি রাখা হয়। বর্তমানে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী এক ডজন সঞ্চয়পত্র আছে।

বিদায়ী অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ লক্ষ্যের দ্বিগুণের বেশি নেওয়ার পর আগামী অর্থবছরে এই খাত থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ধারের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬৯ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নেওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।