এক ছাতার নিচে বিনিয়োগকারীদের সব সেবা দিতে আইন আসছে

বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের এক ছাতার নিচে ১৬ ধরনের সেবা দিতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2017, 09:22 AM
Updated : 8 May 2017, 10:49 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইন- ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, “দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার করার জন্য এবং তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিতে এই আইন হচ্ছে।”

ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭’ প্রতিবেদনে ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭৬তম অবস্থানে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে শফিউল বলেন, সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এই সূচকে একশর নিচে নামিয়ে আনতে চায়।

“সেটা করতে গেলে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করতে হবে, বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে, সেজন্য একটা শর্ত ছিল ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন প্রবর্তন করা। এটা ছোট্ট প্যাকেজ আইন। এটাতে মূলত ওয়ান স্টপ সার্ভিস কীভাবে পরিচালিত হবে তার একটা আইডিয়া দেওয়া হয়েছে।”

# এ আইন হলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ‘কেন্দ্রীয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। মোটামুটি ১৬ ধরনের সেবা দেবে তারা।

# ট্রেড লাইসেন্স, জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরিতে এসব সেবা দেওয়া হবে। এক জায়গায় বসেই যাতে এসব অনুমোদন পাওয়ো যায়, সে সুযোগ থাকবে এই আইনে।

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম এর আগে জানিয়েছিলেন, আইন হয়ে গেলে তারা ছয় মাসের মধ্যে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে চান।

সেক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানিকতার জন্য আর বিভিন্ন অফিসে অফিসে ঘুরতে হবে না। যে কোনো জায়গায় বসে অনলাইনেই স্বল্পতম সময়ে সেবা পাওয়া যাবে এবং নতুন ব্যবসা শুরু করার জটিলতা অনেকাংশে লাঘব হবে। 

বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে তা বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বিধি না মানলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আইনের খসড়া অনুযায়ী, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি নাম ছাড়পত্র দেবে, নিবাসী-অনিবাসী ভিসা দেবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ঘোষণা দেবে বেজা বা হাইটেক পার্ক। অর্থনৈতিক রপ্তানি প্রক্রিয়া এলাকা দেবে বেপজা। ওয়ার্ক পারমিট দেবে বেজা, বেপজা বা হাইটেক পার্ক। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান- যেমন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা দেবে ট্রেড লাইনেন্স।

ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন, জমি কেনা-বেচা ও ইজারার রেজিস্ট্রেশন করবে রেজিস্ট্রেশন বিভাগ, নামজারী হবে ভূমি অফিসে, পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া যাবে পরিবেশ অধিদপ্তরে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন বসানোর অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেবে।

এছাড়া ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা (যেখানে যেটা প্রযোজ্য) দেবে পানি সংযোগ; টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ দেবে বিটিসিএল। অগ্নিনিরোধ সংক্রান্ত সেবা ফায়ার সার্ভিস দেবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

শফিউল আলম বলেন, বিদেশিদের জন্য ভিসা ও ইমিগ্রেশন ‍প্রক্রিয়া সহজ করতেও কিছু সুবিধার কথা থাকছে এ আইনে।

“ওয়ান স্টপ সার্ভিস বা বিনিয়োগ বোর্ড আগেও ছিল কিন্তু সেটি বেশি কার্যকর হয়নি কারণ আইনি কাঠামো ছিল না। এখন আইনের ফ্রেমওয়ার্কে চলে আসবে। কেউ যদি ফেল করে বা কমপ্লাই না করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।”