পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজ হচ্ছে না

বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমীক্ষা করে রাজবাড়ীর পাংশায় গঙ্গা ব্যারেজের যে নকশা তৈরি করেছে, তা নাকচ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2017, 12:06 PM
Updated : 11 April 2017, 02:23 PM

এর বদলে উজানে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে ‘রিজার্ভার’ তৈরি করে শুষ্ক মওসুমে ব্যবহারের জন্য পানি সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।  

এবারের সফরে ভারতের সঙ্গে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি, তিস্তার পানিবণ্টনের অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।    

গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গঙ্গা ব্যারেজ নামে যে ব্যারেজের সমীক্ষা ও যে ডিজাইনইনটা তৈরি করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। এটা আমি নাকচ করে দিয়েছি। কারণ এটা আমাদর জন্য আরও আত্মঘাতী হবে, ওই তিস্তা ব্যারেজের মত আত্মঘাতী হবে।”

তিনি বলেন, “পাংশায় আমার মূল নদীর স্রোতের মধ্যে একখানা ব্যারেজ দিয়ে তারপর পানি পানি করে কানতে হবে আমাদের। এটা আমরা করতে রাজি না।”  

পদ্মায় বাঁধ দিয়ে গঙ্গা অববাহিকার পানি সংরক্ষণ করে তা কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের লক্ষ্যে ১৯৬২-৬৩ সালে প্রথমবারের মত গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের বিষয়ে জরিপ হয়।

এরপর দীর্ঘদিন ঝুলে থাকলেও ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সময়ে গঙ্গার পানিবণ্টনে ভারতের সঙ্গে চুক্তির পর ব্যারেজ নির্মাণের আলোচনা আবার জোর পায়।

ওই ব্যারেজের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০০৫ সালে কাজ শুরুর পর ২০১৩ সালে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়। পরের বছর ভারতকে ওই প্রকল্পের সারসংক্ষেপও হস্তান্তর করা হয়।

তখনকার পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেছিলেন, ওই ব্যারেজ হলে বর্ষা মৌসুমে আসা পদ্মার পানি সংরক্ষণ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলায় সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ১৬০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সে সময় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২০২৬ সালে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই ব্যারেজ নির্মাণের কাজ শেষ না হলে নতুন চুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

এবারও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অববাহিকাভিত্তিক যৌথ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি জোর পায় এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমত বন্দ্যোপাধ্যয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর। 

সংবাদ সম্মেলনে প্রধামন্ত্রী বলেন, “ভারতের সঙ্গে যখন গঙ্গার পানি চুক্তি করি, তখনই আমি বলেছিলাম, আমরা একটা ব্যারেজ করব, গঙ্গা ব্যারেজ, সেই ব্যারেজটা হবে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এবং যৌথভাবে। এমনভাবে এটা তৈরি করা হবে যেন দুটি দেশের মানুষ এটা ব্যবহার করতে পারে।

“আর আমাদের পানিসম্পদ যেটা পাংশায় করেছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুল একটা পরিকল্পনা। ওটা কখনো বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না আমাদের জন্য।”   

এবার মমতার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি জায়গা দেখেন, আমরাও জায়গা দেখি, আমাদের শাখা নদী এবং দুই দেশ মিলে, অর্থাৎ.. ব্যারেজ মানে ওয়াটার রিজার্ভার তৈরি করা। যেন বর্ষাকালে পানিটা আমরা ধারণ করে রাখতে পারি এবং শুষ্ক মৌসুমে পানিটা যেন আমরা ব্যবহার করতে পারি। সেইভাবে একটা জায়গা খুঁজে সেইখানে করাটাই সব থেকে যুক্তিযুক্ত।”

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যারা ওই পাংশায় ব্যারেজের নকশা করেছেন, তাদের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, “কিছু মানুষের চিন্তা থাকে, একটা বানানো গেলেই টাকা আসবে পয়সা আসবে, কমিশন আসবে…।”

গঙ্গা ব্যারেজের ফাইলে নোট লিখে ফেরত দিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নকশা তার ‘পছন্দ হয়নি’।

ব্যারেজ বা রিজার্ভার যাই হোক, তা ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে করতে হবে এবং খরচও যৌথভাবে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।