বাংলাদেশের ৬.৯% প্রবৃদ্ধির আশা দেখছে এডিবি

রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ধীর গতির কারণে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না বলেই মনে করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি।

অর্থনীতি বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2017, 07:04 AM
Updated : 6 April 2017, 02:19 PM

অর্থনীতির হাল হকিকত নিয়ে এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৭’  বলছে, এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

সরকার এবারের বাজেটে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধি আর ৭ শতাংশের নিচে নামবে না।

তবে এডিবির মত বিশ্ব ব্যাংকও সরকারের প্রত্যাশার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারেনি। গত জানুয়ারিতে তাদের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ - এ ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে প্রিন্সিপাল কান্ট্রি স্পেশালিস্ট জয়ৎসানা ভার্মা এবারের ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, “মূলত রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় এবং রপ্তানি আয়ের ধীর গতির কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবার কিছুটা কম হবে।”

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বাজে সময় পার করায় এবং তেলের বাজারে মন্দার কারণে সেসব দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার পরিমাণ গত দুই বছর ধরে কমছে।   

গত অর্থবছরে রেমিটেন্সে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এডিবির পূর্বাভাস বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স কমতে পারে ৭ শতাংশের মত।

আর আগের অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত কিছুদিনে রপ্তানি আয়ে ধীর গতির কারণে এবার তা কমে ৬ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে এডিবি।

ঋণদাতা এ সংস্থার ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর চাই লি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গত অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম হলেও ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো। এক দশক ধরে বাংলাদেশ বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এটা ধরে রাখতে হবে।”

রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমার পরও ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে- এ প্রশ্নে এডিবির পরামর্শক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে বাংলাদেশ।

“সে কারণেই প্রবাসী আয় ও রপ্তানি কমে গেলেও ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হবে না। এ দেশের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা আছে। এটি অর্থনীতির সক্ষমতা, যা টেকসই প্রবৃদ্ধির একটি ধরন তৈরি করেছে।”

জাহিদ হোসেন বলেন, রপ্তানি ও রেমিটেন্স- অর্থনীতির এ দুই সূচক নির্ভর করে বহির্বিশ্বের পরিস্থিতির ওপর। সেখানে বাংলাদেশের করার তেমন কিছু নেই। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদাই টেকসই প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি।

মূল্যস্ফীতির শঙ্কা

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে জয়ৎসানা ভার্মা বলেন, অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতি বাড়তির দিকে। চলতি অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে, যা গত অর্থবছল শেষে ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন কার্যকর হওয়ার পর আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উঠতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেন এডিবির এই কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের আমদানি খাতে খরচ ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। গম, জ্বালানি তেল, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ায় এই খরচ বেড়েছে।

অর্থবছর শেষে আমদানি ব্যয় ৯ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।