মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের ৩ ধাপ অগ্রগতি

মাথাপিছু আয়, গড় আয়ুসহ বিভিন্ন মাপকাঠিতে উন্নতির পথ ধরে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2017, 10:44 AM
Updated : 6 April 2017, 09:41 AM

ইউএনডিপি গতমাসের শেষ দিকে তাদের ওয়েবসাইটে ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৬’ প্রকাশ করলেও বুধবার আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও ইউএনডিপি যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এবারের প্রতিবেদনে ১৮৮ দেশের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ রয়েছে ১৩৯তম অবস্থানে। ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১৪২তম অবস্থানে ছিল। 

২০১৫ সালে প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করেছে ইউএনডিপি।

এসব মাণদণ্ড মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের এইচডিআই মান দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৫৭৯, যা আগের প্রতিবেদনে ছিল শূন্য দশমিক ৫৭৫। আর তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা নরওয়ের এইচডিআই মান শূন্য দশমিক ৯৪৯।

এই সূচকে আসা ১৮৮টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের দেশের স্তরে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে নেপাল (১৪৪) ও পাকিস্তানের (১৪৭) চেয়ে এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা (৭৩), মালদ্বীপ (১০৫), ভারত (১৩১) ও ভুটানের (১২৩) চেয়ে পিছিয়ে আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও ইউএনডিপির যৌথ আয়োজনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বিশেষ বক্তা ছিলেন ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক ড. সেলিম জাহান।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, যেসব দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

এবারের সূচকের শীর্ষ দশ অবস্থানে থাকা ১২ দেশ হল- নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ডেনমার্ক ও সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে কেবল সিঙ্গাপুরই এশিয়ার দেশ। 

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছর, তাদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১০ দশমিক ২ বছর এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বছরে তিন হাজার ৩৪১ ডলার।

 

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ড. সেলিম জাহান অনুষ্ঠানে বলেন, এসডিজির লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে। এটাকে ভিত্তিক ধরেই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের পর থেকে দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে এসেছে। বিশ্বে শিশু মৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষের নিরপদ পানি সুবিধা পচ্ছে।

“কিন্তু এখনও বিশ্বে দারিদ্র্য আছে, অসমতা রয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত অভিঘাত রয়েছে। বিশ্বে এখনও প্রতি তিন জনের একজন মানব উন্নয়ন সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানের নিচে। ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ বহুমুখী দারিদ্র্যের শিকার। প্রতি মিনিটে ১১টি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যাচ্ছে। বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে ৩৫ জন মায়ের।”

বিশ্বের অসমতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “মাত্র আটজন বিলিয়নেয়ার এত সম্পদের মালিক যে তা নিম্ন আয়ের ১৫ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের সমান। এই অসমতা প্রত্যাশিত নয়। এ ধরনের সম্পদ বৈষম্য সামাজিক ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।”

সেলিম জাহান জানান, বায়ু দূষণে প্রতিবছর ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, ৩ লাখ ৮০ মানুষ জীবন হারায় অসংক্রামক রোগে।

“আমরা যদি জলবায়ুর বিষয়টি এখনই গুরুত্বের সাথে না দেখি, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ কোটি মানুষ পুনরায় দারিদ্র্য সীমায় চলে যাবে।”

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। এর প্রভাবে আমাদের যে ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব এগিয়ে না এলে তা আমাদের একার পক্ষে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।”

পররাষ্ট্র পতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উন্নতির পেছনে প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতি বড় ভূমিকা রেখেছে।

 “গত আট বছর ধরে শিক্ষার পেছনে বর্তমান সরকার যে বিনিয়োগ করেছে তার ফসল হচ্ছে এটি। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের ফলে এ উন্নতি সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি।”