একনেকের সায় পেল রূপপুর পরমাণু প্রকল্প

এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2016, 09:55 AM
Updated : 6 Dec 2016, 03:20 PM

শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সভার পর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকার সময় ছোট পরিসরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তখন এটি ছিল ২০০ মেগাওয়াটের। সে সময় পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রকল্প পরিচালকও করেছিলেন। 

“তিনি (বঙ্গবন্ধু) মারা যাওয়ার পর প্রকল্পটা থমকে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সম্ভব হয়নি। এখন রাশিয়ার সহযোগিতায় এটি করা হচ্ছে।”

এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প, বলেন মন্ত্রী।

একটি প্রকল্পে লাখো কোটি টাকার বেশি ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রকল্পটির নির্মাণ খরচ বেশি হলেও এর উৎপাদন ব্যয় কম। এ প্রকল্পে বছরে সবমিলে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।”

রূপপুরে এখানেই হচ্ছে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব‌্যয়ের এই প্রকল্পে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে যে ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা চলতি অর্থবছরের পুরো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) চেয়ে বেশি।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয় সরকার।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ২৬ জুলাইয়ে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি ‘স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কমিশনিং, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে দুই হাজার ৫৩৫ জন কাজ করবে। এছাড়াও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬৯ জন লোক নিয়োজিত থাকবে।

এর আগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৩ সালে পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায় প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। ওই প্রকল্পেও রাশিয়া চার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়।

প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ বাস্তবায়নে রুশ ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট এবং বাংলাদেশের মধ্যে পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে।