মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের ঋণ নেওয়া হচ্ছে।
১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সে হিসাবে এটি একটি কঠিন শর্তের ঋণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশে এত বেশি সুদে এত অর্থ কোনো দেশ বা অর্থলগ্নিকারী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নজির নেই।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করবে।
উচ্চ সুদের বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দুনিয়ায় এ ধরনের ঋণের সুদ হার একটু বেশি হয়।
“এ প্রকল্পটির মাধ্যমে তুলনামূলক অনেক কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সে তুলনায় সুদের হার বেশি নয়। বিশেষ করে আয় থেকে দায় সুদের পরও এ প্রকল্প থেকে দেশ অনেক বেশি লাভবান হতে পারবে।”
তিনি বলেন, বর্তমানে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৮ টাকার বেশি ব্যয় হলেও এ প্রকল্প থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪ টাকা ব্যয় হবে।
“সবচেয়ে বড় কথা আমাদের আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ পাবে। তাই এ ঋণ নেওয়া যৌক্তিক,” বলেন মন্ত্রী।
বিদ্যুতে সরকারের যে মহা-পরিকল্পনা রয়েছে, তা অনুযায়ী উৎপাদন ক্ষমতা ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। ওই সময়ে দেশের বিদ্যুতের ১০ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আনার লক্ষ্য সরকারের।
সুদের বিষয়ে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ঋণের সুদ পরিশোধ পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এ সুদ হার খুব বেশি নয়।
“প্রথমত আমরা বৈদেশিক ঋণ সুদ পরিশোধ প্রবাহে সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। দ্বিতীয়ত আমাদের শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দিতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে এ ঋণ নেওয়ার পক্ষে আমি।”
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া দেবে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ২৬ জুলাইয়ে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি ‘স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কমিশনিং, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে ২ হাজার ৫৩৫ জন কাজ করবে। এছাড়াও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬৯ জন লোক নিয়োজিত থাকবে।
এর আগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায় প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। ওই প্রকল্পেও রাশিয়া ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ বাস্তবায়নে রুশ ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট এবং বাংলাদেশের মধ্যে পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে।