রিজার্ভের টাকা মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ আগামী বছরে: মুহিত

দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আগামী বছর থেকে শুরু হতে পারে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2016, 06:00 PM
Updated : 18 Oct 2016, 06:00 PM

এর আগে গত মাসে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে রিজার্ভের টাকা মেগা প্রকল্পে খাটানোর পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

মঙ্গলবার রাজধানীতে প্রবাসীদের মাঝে রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদানের এক অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের উদ্দেশে মুহিত বলেন, “আমরা ভাবছি রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করব; এতে আপনাদের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।

“এটা মনে হয় এবছর আর সম্ভব হবে না। আগামী বছর থেকে হতে পারে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ গত ১ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে। প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

সরকার মোট দশটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘মেগা প্রকল্প’। পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনালও রয়েছে এসব প্রকল্পের মধ্যেম।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সাধারণত সরকারি অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন মাত্রার সুদে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। বিদেশিদের কাছ থেকে এসব ঋণ নিতে বিভিন্ন ধরনের কঠিন শর্তও মানতে হয় সরকারকে।

এবার সরকার সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার উদ্বৃত্ত রিজার্ভ থেকে, যার প্রায় অধিকাংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় থেকে।

প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৫’ প্রদান উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) পাঠানো ২৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি, পাঁচজন বন্ডে বিনিয়োগকারী এবং চারটি বাংলাদেশি মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউসকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পুরস্কার চালু হয় ২০১৩ সালে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বাঙালিদের চরিত্রের একটা দিক আছে। দেশপ্রেমের বিষয়টা একটু অন্য রকম। দেশপ্রেমটা একটু বেশি।”

দেশপ্রেমের একটি উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, “দেখা গেছে বাংলাদেশ বিমান ১০ ঘণ্টা দেরি করে। প্রবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করে। তারপরও তারা অনেক অপেক্ষার করে ওই বিমানেই আসেন।”

তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অত্যাচার ও কাস্টমসের টানা-হেঁচড়া আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এখন বোধ হয় কিছুটা ভদ্র হয়েছি।”

অনুষ্ঠান থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহতাবুর রহমান।

তিনি বলেন, “সবাই বলেন যে বিদেশে প্রত্যেক বাংলাদেশিই একজন রাষ্ট্রদূত; এই দূতদের বঞ্চনার চিত্রও রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাই।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবরার এ আনোয়ার ও ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে চার ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থাকা প্রবাসীরা।

দক্ষ শ্রেণিতে ‘বেস্ট রেমিটার’ পুরস্কার পেয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ইউএই প্রবাসীদের মধ্যে মো. শফিক, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, সৈয়দ এ কে আনসারুজ্জামান, মোহাম্মদ আক্তার হোসাইন, মোহাম্মদ সেলিম ও জাগির হোসেন চৌধুরী পুরস্কার পেয়েছেন।

এ শ্রেণিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে খান মোহাম্মদ মুহিবুল বারী, রাশিয়া থেকে এসএম পারভেজ তমাল ও রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু, যুক্তরাজ্য থেকে রায়হান আলাউদ্দিন, অস্ট্রেলিয়া থেকে শহীদ হোসেইন জাহাঙ্গীর, চীন থেকে মো. সেলিম মিয়া, কাতার থেকে মোহাম্মদ ইসমাইল ও ইকবাল হোসেন, কুয়েত থেকে জাকির হোসেন, সৌদি আরব থেকে দেওয়ান সাদেক আফজাল ও জেড ইউ সাঈদ, নাইজেরিয়া থেকে নওশাদ আহমেদ, ফিজি থেকে আবু মোহাম্মদ জাকারিয়া এবং ফিলিপাইন থেকে আবু তাহের মোহাম্মদ আমানুল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন।

অদক্ষ শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন মোট ছয়জন। এর মধ্যে মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ আজম, আবদুল ওয়াহ্হাব ও মো. শাহাব উদ্দীন- এই চারজন পেয়েছেন ইউএই থেকে; আর মো. মুর্শিদ উজ্জামান হংকং থেকে এবং মোহাম্মদ আলী রেজা কানাডা থেকে এই পুরস্কার পান।

বন্ডে সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন ইউএই থেকে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান, ওমর ফারুক ও জেসমিন আক্তার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসিফ এ চৌধুরী ও আরিফ এ চৌধুরী। 

পুরস্কার পাওয়া চার এক্সচেঞ্জ কোম্পানি হচ্ছে প্লাসিড এন কে করপোরেশন, ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এস আর এল, এনইসি মানি ট্রান্সফার হাউস এবং কে এম বি ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার লিমিটেড।