বিনিয়োগ করুন মানব সম্পদ উন্নয়নে, পরামর্শ বিশ্ব ব‌্যাংকের

গরিবি হটাতে অনেকটা সফল বাংলাদেশকে এখন মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2016, 04:25 PM
Updated : 17 Oct 2016, 04:26 PM

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল‌্য দেখতে ঢাকায় আসা বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সফরের মধ‌্যে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই পরামর্শ আসে।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় রোমার বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ ভালো করেছে; তবে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

“একটি বিষয় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে; বিনিয়োগ হতে হবে মানুষের উপর। মানব সম্পদে বিনিয়োগ করে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশকে এখন সেই কাজটিই করতে হবে।”

উদাহরণ টেনে বিশ্ব ব‌্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদন বলেন, “এক সময় দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তাদের আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। এখন তারা কোথায়… উঠে গেছে।

“মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে তারা এই পর্যায়ে উঠে গেছে।”

পল রোমারের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তার সরকার ইতোমধ‌্যে সেদিকে এগিয়েছে।

“দারিদ্র্য বিমোচন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এখন আমাদের সরকারের মূল এজেন্ডা। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো হচ্ছে।”

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরির মাধ‌্যমে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ভারতের সিএনবিসি-টিভি এইটিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শিরিন ভানের সঞ্চালনায়
এন্ড গ্লোবাল পোভার্টি বাই ২০৩০: শেয়ারিং বাংলাদেশ’স এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক আলোচনায়
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং নারী উদ্যোক্তা মোহাম্মদী গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবানা হকও অংশ নেন।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসা দক্ষিণ কোরীয় বংশোদ্ভূত বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কিম দর্শক আসনে বসে আলোচনা শোনেন।

শিরীন শারমিন বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচির আওতায় নারীদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নারীদের দরিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে।”

নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসাও করেন তিনি।

শিরীন শারমিন বলেন, বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা ভাতা, দরিদ্র নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রায়ন প্রকল্প প্রভৃতির মাধ্যমে গরিবি হটাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গ্রামভিত্তিক উন্নয়নে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।

“যার ফলে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমে আসছে। আরও কমে আসবে। বাংলাদেশ ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ায় কর্মসংস্থান বাড়ছে, দারিদ্র্যের হার কমছে।”
আলোচনার শেষ পর্যায়ে সঞ্চালকের আমন্ত্রণে দর্শক সারি থেকে মঞ্চে এসে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট কিম বলেন, “বাংলাদেশকে এখন দারিদ্র্য বিমোচনে মাইলফলক বলা যেতে পারে। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা সম্ভব।”

দারিদ্র্য বিমোচনে ‘অভাবনীয়’ সাফল্যের জন্য তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানান।