বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সংশয়

নতুন অর্থবছরের বাজেটে ‘পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায়’ সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা বড় প্রকল্পগুলোর যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2016, 12:33 PM
Updated : 22 June 2016, 01:10 PM

নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের তিন সপ্তাহ পর বুধবার তার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন একথা বলেন।

তিনি বলেন, “সরকার ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে পদ্মা সেতু এবং রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের প্রথম পর্যায়ের ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতি খুবই ধীর; ১০ শতাংশেরও নিচে।”

“নতুন বাজেটে এই প্রকল্পগুলোর জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এই কম বরাদ্দ দিয়ে কাজ চলতে থাকলে এগুলোর বাস্তবায়নের সময় অনেক বেড়ে যাবে।”

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে। নতুন বাজেটে এই সেতুর জন্য ৬০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ দিয়ে কাজ চললে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হতে আরও ৩ বছর ১ মাস সময় লাগবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি নেই বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পের জন্য বাজেটে ৪১০ কোটি ২০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এ হিসাবে চলতে থাকলে কাজ শেষ হতে সাড়ে ৮ বছর সময় লাগবে।

‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগ্যাজ রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের জুন মাস থেকে শুরু করে প্রকল্পটি ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

তবে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত অংশের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার আশা করা হচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার (রামপাল) প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রায় ছয় বছর এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হতে ১৫ বছর সময় লাগবে।

জাহিদ হোসেন বলেন, “এর বাইরে মেট্রারেলের জন্য নতুন বাজেটে ২২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই হারে বরাদ্দ নিয়ে কাজ শেষ করতে সময় লেগে যাবে সাড়ে নয় বছর।”

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে আরো এক বছরের বেশি সময় লাগবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর চুক্তি হয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের।

সে অনুযায়ী, ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে; যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

৫০ বছর আয়ুর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমদুম রেলপথ নির্মাণের কাজ নিয়েও নিজেদের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

সংস্থাটি বলছে, প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে প্রায় ৩০ বছর; আর পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ শেষ করতে আরও চার বছর পার হয়ে যাবে।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে হলে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর চ্যালেঞ্জ মোবাবিলার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে।”

২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বাজেটে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর জন্য আলাদা আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের সময়সীমাও উল্লেখ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।

আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে।

বাজেটের মূলায়ন করতেই বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় আবাসিক প্রতিনিধি চিমিও ফান উপস্থিত ছিলেন।

বাজেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো।  মূল্যস্ফীতি সহনীয়। রপ্তানি বেশ ভালো। রিজার্ভ বাড়ছেই। ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিম্নমুখী।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।

এই ধারা ধরে রাখতে বড় বাজেটের অবশ্যই প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।

“বড় বাজেট কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা বাস্তবায়নের। গুণগতমানের বাস্তবায়নের।”

‘ঘাটতি ও ঋণের বোঝা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই’ উল্লেখ করে জাহিদ বলেন, “পাইপলাইনে ২০ বিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি সাহায্য রয়েছে তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

রাজস্ব আদায়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।