ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ও মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আগামী ২৬ জুন।
Published : 16 Jun 2016, 01:26 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন বলে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ফলে এসব প্রকল্পে নতুন গতি আসবে এবং শিডিউল অনুযায়ী চলমান কাজ এগিয়ে যাবে।
মেট্রোরেল
মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, এখন শুরু হয়েছে বাস্তবায়ন, ইতোমধ্যে ডিপো উন্নয়নের কাজও শুরু হয়েছে।
“মেট্রোরেলের রুট-৬ হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। থাকবে ১৬টি স্টেশন। প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে এ রুটে।”
তিনি বলেন, মেট্রোরেল-৬ এর রুট উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে। ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৬টির দরপত্র আহ্বান কাজ শেষ হয়েছে। ১টি প্যাকেজের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকার অর্থায়নে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে জাইকা সহায়তা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোরেল রুট-৬ এর পাশাপাশি আরও দুটি রুট নির্মাণের প্রস্তুতি শুরুর কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এরমধ্যে ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রুট-১ হচ্ছে গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত।
রুট-১ এ প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার হবে আন্ডারগ্রাউন্ড।
তিনি বলেন, মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেল-৫ এর রুট। এটি নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা থেকে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড।
জাইকা ইতোমধ্যে মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে বলেও জানান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।
বিআরটি
টঙ্গী ও উত্তরার সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত সহজতর করতে বিআরটি রুট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “এর ফলে অধিক যাত্রী দ্রুত পারাপার, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক সেবা নিশ্চিত করে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করাও অনেকাংশে সহজ হবে।”
তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার সম্ভব হবে। তিন মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে।
“গাজীপুর টার্মিনাল থেকে বিমানবন্দর- সাড়ে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিআরটি রুটে থাকবে ২৫টি স্টেশন। নির্মাণ করা হবে ছয়টি ফ্লাইওভার।”
এর মধ্যে উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন থাকবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাকি ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতল। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাস ভাড়া আদায়ে থাকবে ইলেক্ট্রনিক স্মার্ট কার্ড।”
বিআরটি প্রকল্পে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি এতে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড।
“ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছি। বাস্তবায়ন কাজও শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিআরটি চালু হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ ও বিআরটির প্রকল্প পরিচালক একরামুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।