এসডিজি অর্জনের চ্যালেঞ্জ অর্থায়ন: সিপিডি

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতি দেখালেও জাতিসংঘের নেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে সিপিডি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2015, 11:42 AM
Updated : 5 Oct 2015, 01:05 PM

এছাড়া জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে এই কর্মসূচি সম্পৃক্ত করা, বাস্তবায়নের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, তথ্য ও পর্যবেক্ষণ এবং সকলের অংশ গ্রহণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাকেও চ্যালেঞ্জ মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি।

সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

এসময় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষক তৌফিক আলী খান, খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।

২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৯৩টি দেশ বিশ্বের সব মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়, যাকে বলা হচ্ছে ‘ট্রান্সফরমিং আওয়ার ওয়ার্ল্ড :দা ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনএবল ডেভেলপমেন্ট’।

দেশগুলো মিলে একটি অভিন্ন কর্মসূচিও নিয়েছে। যেখানে প্রধানত ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে, যা দেশগুলোর একটি আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক সমঝোতাও। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশগুলো এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ শুরু করবে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে এসব লক্ষ্য অর্জনে কাজ চলবে।

বৈশ্বিক ওই কর্মসূচি বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ কী কী, তা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। 

দেবপ্রিয় বলেন, আন্তঃসরকার কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এসডিজি অর্জনে বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বিনিয়োগ দরকার হবে। আর আঙ্কটাডের রিপোর্ট অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন থেকে ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ লাগবে।

“কিন্তু এই অর্থের জন্য আন্তর্জাতিক কোনো তহবিল বা কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাবে না, এটা স্পষ্ট। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দেশগুলোকে এই অর্থের সংস্থান করতে হবে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সামাজিক নিরাপত্তায় জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করছে, এসডিজি অর্জনে এই খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। একইভাবে শিক্ষায় ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে জিডিপির ৬ থেকে ৭ শতাংশ, নারী উন্নয়নে ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করতে হবে। শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

“কিন্তু এসব অর্থ কীভাবে আসবে, তার স্পষ্ট কোনো পথনির্দেশ নেই,” বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বাংলাদেশের সাবেক প্রতিনিধি দেবপ্রিয়।

বিদেশি বিনিয়োগে গতি না আসায় অতিরিক্ত অর্থ সংস্থান বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে বলে তার মত। 

“বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ অর্থ পাচার হচ্ছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ২২ দশমিক ১ শতাংশে কয়েক বছর ধরে স্থির হয়ে আছে, উন্নয়ন সহযোগিতার সবটা সরকার কাজে লাগাতে পারছে না, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ দশমিক ৯ শতাংশ, যা হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান করা সত্যিকারেই কঠিন।”

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপরও জোর দেন সিডিপির সাবেক নির্বাহী পরিচালক দেবপ্রিয়।

এসডিজির গ্রহণের আগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে কাজ করেছে। এমডিজি অর্জনে সমপর্যায়ের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

সিপিডি বলছে, অবকাঠামো সঙ্কট, সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও বাংলাদেশ দারিদ্র বিমোচন, শিশুপুষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষায় অংশ গ্রহণ, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা, শিশু মৃত্যু কমানো, এক বছরের কম বয়সীদের শিশুদের প্রতিষেধক দেওয়া, এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থায় অনেক এগিয়ে।

তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া, স্বাক্ষরতা বাড়ানো, নারীদের মজুরি বাড়ানো, মাতৃমৃত্যুর হার কমানো ও বনায়নের ক্ষেত্রে এমডিজিতে অর্জন সন্তোষজনক নয় বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ। পাশাপাশি অসম উন্নয়ন এবং আয় বৈষম্যের বিষয়টিও তুলে ধরেছে তারা। 

বাংলাদেশের কমপক্ষে ১৪টি জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজি সম্পৃক্ত বলে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপর রাখার পক্ষপাতি সিপিডি।

বর্তমানে বিশ্ব যেভাবে চলছে তাতে আন্তর্জাতিক এই অভিপ্রায় ও বাস্তবতা সাংঘর্ষিক বলে মনে করে সিপিডি।

দেবপ্রিয় বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অশান্তি, সন্ত্রাস, বৈরী আচরণ, উদ্বাস্তু সমস্যা, সংঘর্ষ চলছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, অর্থনীতি নাজুক হচ্ছে, ইবোলার মতো নতুন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে, যুব বেকারত্ব এখন রেকর্ড।

“ফলে এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সদিচ্ছাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।”

এসডিজি বাস্তবায়নে যে ১৭টি লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আটটিতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে বলে মনে করে সিডিপি। সেগুলো হচ্ছে-দারিদ্র, ক্ষুধা ও পুষ্টি, শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, পানি ও স্যানিটেশন, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব (গ্লোবাল পার্টনারশিপ)।

আর ৯টি লক্ষ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ বলে মনে করছে সংস্থাটি। সেগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্য, সবার জন্য প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন, অসমতা, শহর ও মানব বসতি, টেকসই ভোগ ও উৎপাদন, সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার, বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্য ও সুশাসন।