বৃহস্পতিবার ‘আসন্ন মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিত’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক পরামর্শ সভায় তিনি একথা জানান।
রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে আয়োজিত এই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান, প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল, নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের অর্ধশতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।
আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রসারণমূলক না সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়া উচিত- সভায় সাংবাদিকদের কাছে তা জানতে চান বিরূপাক্ষ পাল।
আলোচনা অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের অধিকাংশই ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিতের পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে সুদ হার কমিয়ে উৎপাদনমুখী খাতে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো যায় এমন মুদ্রানীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা।
আতিউর বলেন, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটো বিশেষ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে।
“আমরা বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছি, যা নতুন কারখানা স্থাপন ও পুরানো কারখানা সংস্কার (বিএমআরই) করার জন্য দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে “
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে ২০ কোটি ডলারের একটি তহবিল চালু করবে। ‘গ্রিন আউটপুট প্র্রসেসিং’ খাতে এই তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে।
আগামী মুদ্রানীতিতে এই তহবিল দুটোর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো জানিয়ে গভর্নর বলেন, এবারের মুদ্রা নীতিতে সবুজ অর্থায়নের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হবে।
“তবে আমরা নয়া ধারার কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং চালু করেছি। এই নতুন ধারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে টেকসই অর্থনীতির জন্য টেকসই অর্থায়ন। এজন্য মুদ্রানীতিতে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা থাকছে। আমরা একেবারে ছোট ছোট করেই সব সমাধান করব, তা ভাবছি না। এজন্য সামাজিক দায়বদ্ধতার অর্থায়ন ব্যবস্থা চালু করেছি।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বাংলাদেশে শুধু মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়, তা নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও এ বিষয়ে প্রভাব ফেলে। বিচার বিভাগ, ট্রাফিক, অবকাঠামো ও দুর্নীতি সমস্যার সমাধান হলে বর্তমান পরিস্থিতিতেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।”
আলোচনায় অংশ নেন অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান, সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির, সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি আশিক চৌধুরী, এস এ টেলিভিশনের বিজনেস এডিটর সালাহউদ্দিন বাবলু, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিদ্দিক ইসলাম প্রমুখ।
‘সব কিছু হাতে নেই’
বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই বলে গভর্নর কথায় আভাস মিলেছে।
আলোচনায় সাংবাদিকরা রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সুশাসন ও কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ বাড়ানো নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর বলেন, “রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে নানা সমস্যার কথা আমরা জানি ও বুঝি। সব কিছু যে আমাদের হাতে থাকে তা নয়। তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি সুশাসন নিশ্চিত করার।”
“সরকার যে আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংকের) কথা একেবারে শুনছে না, তা নয়। ইতোমধ্যে সরকারকে আমরা দুটো ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার জন্য বলেছি, সরকার তা করেছে। একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের জন্য বলেছি, তা-ও করেছে।”
“এরপরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ত আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। সেখানে সরকার স্টেকহোল্ডার বা মালিক। সেক্ষেত্রে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমাদের হাতে যতটা করার আছে আমরা সেটা করছি। সরকারও চেষ্টা করছে আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার,” বলেন আতিউর।
কোনো ব্যাংকে অনিয়ম ধরা পড়ার পর পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথাও বলেন তিনি।