চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, যানজট ও বেহাল সড়কসহ নাগরিক দুর্ভোগের জন্য মেয়র, সাংসদ ও সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের দায়ী করে তাদের উপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
Published : 25 Aug 2017, 10:42 PM
মানুষ এখন নানা কারণে নীরব থাকলেও তারা ক্ষমা করবে না বলে ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন বলছেন, হজ থেকে ফিরে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রামে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘রুখে দাঁড়াবেন’ তিনি।
সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে শুক্রবার নগরীর চশমা হিলের বাড়িতে একদল গণমাধ্যমকর্মীকে তিনি বলেন, “আমি বেশ কিছু দিন কথা-বার্তা বলা বন্ধ রেখেছি। অবশ্য কথা বললে তো যারা শুনবে- তারা নারাজ।
“চট্টগ্রামের মধ্যে বিশেষ করে যারা অথর্ব, অযোগ্য, অদক্ষ ও অপরিপক্ব তারাই নেতৃত্বে আছে। ফলে আমরা আওয়াজ করি না, চেষ্টাও করি না।”
নগরীর জলাবদ্ধতা, সড়কের বেহাল দশা, কর্ণফুলীর ড্রেজিং, মেয়র ও সাংসদদের ‘নিস্ক্রিয়তা’ এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন সাবেক মেয়র।
নগরীর সাংসদদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নেতারা সংসদে যায় কথা বলার জন্য। চট্টগ্রাম মহানগরীতে যারা আছেন, সংসদে তাদের একটা কথা বলতে শুনেছেন? সংসদে তারা বসে থাকে। তাদের কথা হল- সংসদে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে।”
চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে শেখ হাসিনা যথেষ্ট বরাদ্দ দিলেও তা ‘যথাযথভাবে’ ব্যাবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ মহিউদ্দিনের।
তিনি বলেন, “উন্নয়নে তো নেত্রী প্রচুর পরিমাণে টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু সেই উন্নয়নের নামে কতগুলো অপকর্ম হচ্ছে। যেমন ধরেন- জলাবদ্ধতা একটা সহজ ব্যাপার। সমস্ত দুনিয়া আজ হাতের মুঠোয় এসে গেছে। সামান্য জলাবদ্ধতা নিরসন করতে এত বেশি লম্ফঝম্প কেন?
“জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, জলাবদ্ধতা বন্ধ করব, করেন না। এক সপ্তায় করা যায়। চুরি করতে, টাকা বানাতে যদি এক সপ্তায় পারেন, তাহলে এটা পারবেন না কেন?”
জলাবদ্ধতা নিয়ে নিজের শেষ মেয়াদে সমালোচনার মুখে থাকা সাবেক এই মেয়র জলাবদ্ধতা দূরে কর্ণফুলী নদী খননের উপর জোর দেন।
“ড্রেজিং মেশিন ছাড়া তো করা যাবে না। একবার তো ড্রেজিং মেশিন নামিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তারা আত্মসাত করে চলে গেছে। ফলে কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে গেছে। ড্রেজিং করা হয়নি।
“ইমপোর্ট করেন ড্রেজিং মেশিন, এনে ড্রেজিং করান। ড্রেজিং করলেই পানির স্রোত বেশি থাকবে। নালা-নর্দমার মধ্যে যে আবর্জনা সেগুলো একসাথে চলে যাবে। খুব কঠিন নয়।”
ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “পানীয় জলের তীব্র অভাব। এখন পর্যন্ত ওয়াসার ‘অথর্ব’ ব্যক্তিরা মনে করছে না সেসব এলাকায় গিয়ে বিনা পয়সায় পানি দিই।”
নগরীর সড়কগুলোর দুরাবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মহিউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা। এটা কি দ্যাশ না শহর। না এভাবে মানুষকে ঠকিয়ে বড় বড় কথা বলে যাওয়া যাবে না। মানুষ নীরব আছে বিভিন্ন কারণে। মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবে না।”
নাছিরের ‘শুধু কথা আর কথা’
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, “আমাদের নাছির সাহেবকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। আমরা তাকে বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তারই বদৌলতে যেসব কথা-বার্তা বলছে, মনে হয় যেন রাষ্ট্রপতির চেয়েও অনেক বড় হয়ে গেছে।
“কথা কথা কথা শুধু। মাইকে কথা বলবে, গাড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলবে। সর্বক্ষণ উনি কাজে ব্যস্ত থাকেন। কী কাজ করেছেন? রাস্তায় এক হাঁটু পানি, এক বুক পানি। এগুলো নিঃসরণের কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।”
বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে হতাশা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “উন্নয়ন তো নেই। কিছু রিলিফ তো আনা যায়। সংগ্রহ করেন না। যখন মেয়র ছিলাম না, নেত্রী যখন ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন চট্টগ্রামে অসংখ্য সমস্যা ছিল। খাওয়া-দাওয়া, জলোচ্ছ্বাসের…। চাল-ডাল সংগ্রহ করে মানুষের কাছে গিয়েছিলাম।
“গায়ে সে শক্তি নাই। তবু আমার স্ত্রী আর কিছু লোকজনকে দিয়ে কিছু এলাকায় ত্রাণ-পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ইচ্ছে করলে তো পারেন, করেন না কেন? এরা তো প্রচুর আয় করছেন- এমপিরা।”
‘বিজ্ঞাপনের আশায় সত্য বলা বন্ধ’
চট্টগ্রামের ‘প্রকৃত পরিস্থিতি’ তুলে ধরতে সংবাদকর্মীসহ অনেকেই অনিচ্ছুক বলে দাবি করেন মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, “প্রকৃত কথা বলতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করছি, বলছি না। সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারা বিভিন্ন কারণে পারেন না। আপনাদের মামলা দেওয়া হয় ৫৭ ধারায়। বিজ্ঞাপন আছে। বিভিন্ন কারণে তারা চেঞ্জ হয়ে গেছে।
“মানিক মিয়া (তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া) তো না হলে পরে দেশ স্বাধীন হত না। বঙ্গবন্ধুর আহ্বান মানিক মিয়ার মাধ্যমে সর্বস্তরে পৌঁছে যেত। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার, কিন্তু যাননি।”
নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম ফারুক ও শফিক আদনান এ সময় মহিউদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন।