অসুস্থ হয়ে দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
Published : 06 Jun 2017, 03:47 PM
৯৫ বছর বয়সী শফীকে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় এনে গেণ্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শারীরিক দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে গত ১৮ মে থেকে চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়ের সিএসসিআর নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আহমদ শফী। সেখানে সিসিইউতে তাকে কয়েকদিন রাখা হয়।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মইনুল ইসলাম-এর মহাপরিচালক শফী তার ঘরানার মানুষের কাছে যেমন শ্রদ্ধেয়, তেমনি নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের কারণে অন্য মহলে বিতর্কিতও।
চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে কয়েকদিন থাকার পর তার অবস্থার উন্নতির কথা জানিয়েছিলেন হেফাজত আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ।
চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে আহমদ শফীর মাদ্রাসায় ফেরার কথাও জানিয়েছিলেন মুনির; কিন্তু পরে আর তা হয়নি। সেখান থেকেই মঙ্গলবার তাকে ঢাকায় আনা হয়।
হেফাজত আমিরের ছেলে বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শফিউল আলমও ঢাকায় এসেছেন।
বিকালে আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই আহমদ শফীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে মাওলানা ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
আজগর আলী হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সরওয়ারে আলম এবং নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নূরুল হুদার তত্ত্বাবধানে হেফাজত আমিরের চিকিৎসা চলছে।
হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ই গত ২১ মে থেকে আহমদ শফী মুখে খাবার নিতে পারছেন না। তাকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে।
আমিরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির সাংবাদিকদের বলেন, “চিকিৎসকরা দর্শনার্থীদের হাসপাতালে ভিড় না করতে বার বার অনুরোধ করেছেন। দেশবাসীর কাছে উনার রোগমুক্তির জন্য দোয়া কামনা করছি আমরা।”
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম তিন বছর আগে ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ থেকে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে আলোচনায় আসে।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠে নামা সংগঠনটি ওই বছরের ৫ মে ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তি ও নারীনীতি বাতিলসহ ‘বিতর্কিত’ ১৩ দফা দাবিতে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়, সংঘাতে নিহত হন বেশ কয়েকজন।
সুপ্রিম কোর্টের সামনে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’ আদলে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে ফের মতিঝিলে সমাবেশের হুমকি দিয়ে সম্প্রতি আবার আলোচনায় আসে হেফাজত।
এরপর গত মাসে গণভবনে কওমী মাদ্রসাগুলার শীর্ষ প্রতিনিধি এবং শাহ আহমদ শফীর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে বলেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমান ঘোষণা করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে তখন আহমদ শফীকে ‘রাষ্ট্রের আধ্যাত্মিক মুরব্বি’ অভিহিত করা হয়।