পর্যটন শিল্পের বিকাশে ‘ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ গঠন প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
Published : 16 May 2017, 08:49 PM
বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগকে পর্যটন শিল্প বিকাশে বাধা হিসেবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত পর্যটন বিষয়ক এক আন্তজার্তিক সেমিনারে তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা।
সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বয় সাধনের জন্য ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির কথা সেমিনারের আলোচনায় উঠে এসেছে বলে সেনিনার শেষে সাংবাদিকদের জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
২৯তম ক্যাপ-সিএসএ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ক্রাইসিস কমিউনিকেশন ও টেকনিক্যাল ট্যুর’ শীর্ষক সেমিনার চট্টগ্রাম নগরীর র্যাডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা ইউএনডব্লিউটিও’র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কমিশনগুলোর যৌথ আয়োজনে তিন দিনব্যাপী ২৯তম ক্যাপ-সিএসএ সম্মেলন শুরু হয় সোমবার।
দ্বিতীয় দিনের ওই সেমিনারে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির।
তিনি বলেন, “অনেক বিদেশি পর্যটক তাদের সফর বাতিল করেছেন। স্বরাষ্ট্র-পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় ওই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমও এখানে ভালো ভূমিকা রেখেছে।”
“পর্যটন শিল্পের বিকাশে ও ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি করা গেলে ভালো হয়।”
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “আমাদের প্রতিনিধি বলেছেন যে, বাংলাদেশে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে- একটা ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি করা।
“এটা যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দেখা হয়, কিন্তু যখন টেরোরিজম জাতীয় ঘটনা ঘটে তখন সেখানে একটা ন্যাশনাল কমিটি যদি না থাকে- তাহলে পরে এটাকে ট্যাকল করা বেশ কঠিন হয়ে যায়।”
মেনন বলেন, “সুতরাং আমরা চাইব- এ থেকে যা বেরিয়ে আসল, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রিপেয়ারডনেস (প্রস্তুতি)। যদি প্রতিটি ঘটনার সাথে মিলিয়ে ন্যাশনাল কমিটি কাজ করে, সেটাই প্রস্তুতি।
“আমরা এখনও পর্যন্ত যখন যেটা আসছে তখন সেটাকে মোকাবেলা করছি। যদি কোনো বন্যা, সুনামি জাতীয় বা সিডর হয় তখন সেটা ডিজাসটার ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রণালয় করছে। যখন আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন থাকে তখন সেটা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।”
ভিন্ন ধর্মী এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী মেনন বলেন, “এগুলোকে সমন্বিত জায়গায় নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে আজকের আলোচনায় বেরিয়ে আসল। সেটা করতে গেলে পরে ন্যাশনাল কমিটি ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট হওয়া বাঞ্চনীয়।
“আমাদের ক্ষেত্রে এসে যেটা আঘাত করে সেটা হল- ট্যুরিজমে আঘাত করে। হলি আর্টিজেনের পরে আমাদের এখানে বিদেশি ট্যুরিস্টদের আগমন কমে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মিডিয়ার সাথে কমিউনিকেশন এবং পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরে কো-অপারেশন করা।”
বনানীর রেইন-ট্রি হোটেলের সাম্প্রতিক ঘটনা পর্যটন খাতে প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মেনন বলেন, “রেইন ট্রির সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। না না .. এগুলো.. এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ।”
সেমিনারে বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসাইন বলেন, “গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি হামলা অন্যান্য দেশে ঘটেছে।
“আমাদের এখানে পর্যটক কম হওয়ার পেছনে সন্ত্রাসী হামলার চেয়েও সরকারি তৎপরতার অভাবটি বেশি লক্ষণীয়।”
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডব্লিউটিও’র চিফ অব কমিউটিকেটরস স্যান্ড্রা কার্বো।
আলোচনায় অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম পার্টনারশিপের ড্যানিয়েল ওয়াগনার, শ্রীলঙ্কার পর্যটন সংস্থার মহাপরিচালক মালরাজ ভারথা কৈরালা, ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিচালক অনি ইনসানি ও জাপানের অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজমের নির্বাহী পরিচালক হিরশি সওয়াবে।