‘সংসদ ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে’

পরিকল্পিতভাবে সংসদ ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2017, 12:58 PM
Updated : 31 Jan 2017, 01:22 PM

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এ আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের এই সমাবেশ থেকে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা ‘বিষোদগার’ এর সমালোচনা করেন সাংবাদিক নেতা বুলবুল।

তিনি বলেন, “যেখানে সাংবাদিকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই, বক্তব্য ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই- সেখানে মাননীয় স্পিকারের ফ্লোর নিয়ে সাংবাদিকদের মর্যাদাহানি করা হচ্ছে।

“যখন আমরা ওয়েজ বোর্ড নিয়ে আন্দোলন করছি, সংবাদকর্মীদের মর্যাদা নিয়ে আন্দোলন করছি, তখন দেখছি আমাদের ফোরামের সর্বোচ্চ নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মর্যাদার উপর আক্রমণ করা হচ্ছে।”

ইকবাল সোবহানের মর্যাদাহানি করতে জাতীয় সংসদকে ব্যবহার করা হচ্ছে অভিযোগ করে বুলবুল বলেন, জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে যেখানে আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই, সেখানে লাগাতারভাবে স্পিকার সময় দিয়ে যাচ্ছেন; উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন কতিপয় সংসদ সদস্য।

ব্যক্তিগতভাবে সংসদ, স্পিকার ও সাংসদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানে আমাদের বিরুদ্ধে লাগাতারভাবে বক্তব্য রাখা হয়, অথচ আমাদের কিছু বলার সুযোগ নাই; সেখানে আমরা মাননীয় স্পিকারের কাছে সুরক্ষা চাই।

“আপনার ফ্লোর ব্যবহার করে আমাদের একজন নেতাকে অপমান করা হচ্ছে, তার কমিটমেন্ট নিয়ে, পেশাগত দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আপনি জাতীয় সংসদের অভিভাবক, জাতীয় সংসদ হচ্ছে রাষ্ট্রের অভিভাবক; কাজেই আমরা আপনার কাছে সাংবাদিক হিসেবে সুরক্ষা চাই।”

বুলবুল বলেন, “আজকে যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে পরে আমি মনে করি উদ্দেশ্যমূলকভাবে যারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, সেটা জঙ্গি হোক, এ রাষ্ট্রের সরকারের বিরুদ্ধে হোক; কোনো চক্র জাতীয় সংসদের মধ্যে ঢুকে গেছে কি না যারা সংসদ এবং গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

সংসদ ও গণমাধ্যম মুখোমুখী হয়- এমন পরিস্থিতি রুখতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাংবাদিকদেরও ভুল হয় জানিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এই নেতা বলেন, “মাননীয় স্পিকার, মাননীয় সংসদ নেতা (প্রধানমন্ত্রী) আপনাদের অনুরোধ জানাই এরকম একটা জায়গায় আমরা যেতে চাই না। আমরা গণমাধ্যমের কর্মী, আমরা সাংবাদিকতা করি; আমরা যে সব সঠিক করি তা না, ভুল হতেই পারে।

“এ সংসদ থেকে আইন প্রণয়ন করে প্রেস কাউন্সিল করা হয়েছে। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হন, আহতবোধ করেন কোনো সংবাদে তাহলে এ সংসদের আইনে গঠিত প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারেন। তাদের (সাংসদ) মাধ্যমে সংসদে প্রণীত আইনে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে তারা যদি শ্রদ্ধা না রাখেন তাহলে সে প্রতিষ্ঠান রেখে লাভ কি।”

স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে গেলে সংসদকে ব্যবহার করা হবে- সাংবাদিক সমাজকে যদি এ বার্তা দেওয়া হয় তহালে সাংবাদিকরা দেশের সকল রাজপথে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।

“চট্টগ্রাম থেকে আজকে জানিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের সকল রাজপথে দাঁড়াবার ক্ষমতা সাংবাদিক সমাজের আছে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রয়োজন হলে রাজপথে তাদের অবস্থান সংহত করবে। এরকম দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা, সংসদ ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা সাংবাদিক সমাজ বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দেবে না।”

সময় থাকতে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একটি যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কতিপয় চিহ্নিত, কতিপয় দুর্বৃত্ত- যাদের সম্পর্কে সমাজে কী ধরনের কথাবার্তা আছে, সে ধরনের কতিপয় ব্যক্তির উসকানিমূলক বক্তব্যে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না।”

শাহবাগে হরতালের সময় এটিএন নিউজের দুই সংবাদকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “শুধুমাত্র নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি প্রথম বিবৃতিতে বলেছেন, কাজ করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি লেগেছে। পরে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন, সেজন্য উনাকে ধন্যবাদ জানাই।”

‘ওয়েজ বোর্ডে প্রধান বাধা তথ্যমন্ত্রী ইনু’

সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, “ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার প্রথম ও প্রধান বাধা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।”

তিনি বলেন, যেখানে রাষ্ট্রপতি বললেন সাংবাদিকদের দাবি যৌক্তিক, প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছেন; তবুও ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা আসেনি।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী

অষ্টম ওয়েজবোর্ডে স্তরবিন্যাসসহ নানান অসংগতি আগে ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “আগের ওয়েজবোর্ডে এ অসংগতিগুলো ছিল না। তথ্যমন্ত্রীর বুদ্ধিতে এ অসংগতিগুলো আনা হয়েছে ওয়েজবোর্ডে।”

সাংবাদিকদের অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে রেখে যে হারে সরকারি কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হযেছে তাতে সাংবাদিক সমাজের মর্যাদাহানি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ।

এছাড়া চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহিদ উল আলম, যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।