বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই

নয় মাস ধরে স্বপ্নের মতো সময় কাটানো বাংলাদেশ দল মুখোমুখি হয়েছে কঠিন বাস্তবতার। শক্তির পরীক্ষা নিতে লম্বা সময় নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বাঘের ডেরায় এসেছে প্রোটিয়া দল। তাদের কাছে সব বিভাগেই পরাস্ত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজাদের। বাঁচা-মরার ম্যাচে সতীর্থদের কাছ থেকে আহত বাঘের মতোই লড়াই চান অধিনায়ক।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2015, 03:44 PM
Updated : 11 July 2015, 03:49 PM

রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরু হবে বেলা তিনটায়।

গত বছরের শুরুতে বাজে সময় কাটছিল বাংলাদেশের। সেই সময়ে একের পর এক ম্যাচ হারছিল টাইগাররা। জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি; যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপে ভালো খেলে তারা। এরপর পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিজেদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান মাশরাফিরা।  

কিন্তু টানা চার আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারে মিলছে গত বছরের সেই বাজে সময়ের ইঙ্গিত। মিলটা দেখতে পাচ্ছেন মাশরাফিও। পুরো ম্যাচ খারাপ খেলছেন না তারা, কিন্তু এমন কিছু ভুল করছেন, যেখান থেকে আর বের হয়ে আসা যাচ্ছে না।  

প্রোটিয়া বোলারদের বিপক্ষে স্বাগতিক দলের অনেক ব্যাটসম্যানই থিতু হতে পারছেন না। এর চেয়ে দু:শ্চিন্তার বিষয়,  যারা থিতু হচ্ছেন, তারাও নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারছেন না। দুর্দান্ত শুরুর পর যেমন বাজে শট খেলে আউট হচ্ছেন সৌম্য সরকার। অমন শুরুর পর এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের কাছে একটা বড় ইনিংস দলের পাওনা।

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি গড়ে ফিরে যাচ্ছেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়, প্রিয় শট স্লগ সুইপ করে সীমানায় ধরা পড়ছেন তিনি।

মুশফিক আউট হওয়ার পর বেশিক্ষণ টিকছেন না সাকিব। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে থিতু হয়েও দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিতে পারেননি। আশা জাগিয়ে হতাশায় শেষ হচ্ছে লিটন দাসের ইনিংস, প্রথম ওয়ানডেতে তো কোনো রানই করতে পারেননি তিনি।

তরুণ সাব্বির রহমান হঠাৎ করেই ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। দলের সেরা এই ফিল্ডারের হাত থেকে এখন বল ছুটছে। রান নিয়ে যেতে পারছেন না দুই অঙ্কে।  তামিম ইকবালকেও লড়াই করতে হচ্ছে রানের জন্য। প্রথম ম্যাচে ১৪ বল খেলেও কোনো রান করতে পারেননি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

ব্যাটিং ব্যর্থতাই সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। টানা তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ধস নামায় ব্যাটসম্যানদের স্বাধীনতা দিতে শুক্রবারের ম্যাচে আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলে স্বাগতিকরা। একজন বিশেষজ্ঞ বোলার কম নিয়ে খেলায় নিজেদের ইনিংস শেষে সত্যিকারের কোনো সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের।

লড়াইয়ের পুঁজি না পাওয়ায় প্রথম ওয়ানডেতে বোলারদের খুব বেশি কিছু করার ছিল না। তারপরও খুব একটা কিছু করতে পারেননি তারা। তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া আর কারো বলেই তেমন ধার ছিল না। 

আরাফাত সানির জায়গায় জুবায়ের হোসেনকে দলে নেওয়া হলেও কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি এই লেগ স্পিনার। তাই দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরতে পারেন বাঁহাতি আরাফাত, একাদশে তার সঙ্গী হতে পারেন এনামুল হক।  

আট ব্যাটসম্যান না খেলিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে সাত ব্যাটসম্যান চার বিশেষজ্ঞ বোলারে ফিরে যেতে পারে বাংলাদেশ। জুবায়ের আর রুবেল হোসেনের মধ্যে কাকে খেলানো হবে তা নিয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি স্বাগতিকরা।

নিজেদের কাছেই নিজেদের পারফরম্যান্স পছন্দ হচ্ছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর চেয়ে অনেক ভালো করার সামর্থ্য তাদের আছে।  ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া মাশরাফি শেষ দুই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার প্রত্যয়ের কথা জানান।

এবারের সফরে তিনবারই বাংলাদেশকে অলআউট করে দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টিতে স্পিনারদের কাছে নাকাল হওয়ার পর এবার কাগিসো রাবাদের পেসে বিধ্বস্ত হয়েছে স্বাগতিকরা। প্রথম ওয়ানডেতে বিশ্ব রেকর্ড গড়া রাবাদা বলতে গেলে একাই শেষ করে দেন টাইগারদের।

ইমরান তাহির, জেপি দুমিনি, কাইল অ্যাবটদের ঠিকঠাক সামলালেও ৮ উইকেটের হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ বছর বয়সী রাবাদাই ব্যবধান গড়ে দেন দুই দলের মধ্যে। পরের ম্যাচে এই তরুণ পেসারকে নিয়ে সতর্ক থাকতেই হবে তামিম-সৌম্য-সাকিবদের।

মর্নে মরকেলের মতো পেসার না খেলার পরও বেশ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং ইউনিট। অভিজ্ঞতার ঘাটতি তারা পুষিয়ে দিয়েছেন প্রাণশক্তি আর ঘাম ঝরানো কঠোর পরিশ্রম দিয়ে।

দুই টি-টোয়ন্টিতে অতিথিদের চারটি করে উইকেট নিতে পারে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে তো দুটির বেশি উইকেট নেওয়াই সম্ভব হয়নি। তাই প্রশ্নটা জোরেশোরেই উঠছে, দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী নাকি টাইগাররাই ভালো খেলতে পারছে না।

মাশরাফি যেমন এগিয়ে রাখছেন অতিথিদের, তেমনি নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করছেন। এক দিনের অনুশীলনে খুব বেশি দূরে এগোনোর ব্যাপারে আশাবাদী নন অধিনায়ক। তাই দলের মানসিকতায় পরিবর্তন দেখতে চান মাশরাফি।

বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াইয়ের আগে নির্ভার দক্ষিণ আফ্রিকা। রোববারই সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় তারা। অতিথিরা যেভাবে খেলছে, তাতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সিরিজ টেনে নিতে নিজেদের সেরা ক্রিকেটে ফিরতে হবে স্বাগতিকদের। বোলিং-ফিল্ডিং ঠিকই আছে; অলরাউন্ডার নাসির হোসেন তাই সংবাদ সম্মেলনে বলে গেলেন, ব্যাটসম্যানরা ছন্দে ফিরলেই অতিথিদের হারাতে পারবেন তারা।