আরেকটি প্রথমের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট, পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি প্রথম জয় চায় বাংলাদেশ। খুলনায় প্রথম টেস্ট জিতে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান চায় স্বাগতিকরা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতখুলনা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2015, 02:50 PM
Updated : 27 April 2015, 02:51 PM

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টানা চার জয়ের পর টেস্ট সিরিজ নিয়েও আত্মবিশ্বাসী মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসানরা। মঙ্গলবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হবে সকাল ১০টায়।

২০০১ সালের অগাষ্টে মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। তারপর আরও সাতটি টেস্টে খেলে সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।

এই মুলতানেই আরেক টেস্টে জয়ের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফের কারচুপিতে জয়ের খুব কাছে গিয়েও ২০০৩ সালের সেই ম্যাচে ১ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। মুশফিকরা এবার ভুলতে চায় মুলতান টেস্টের আক্ষেপ।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয় এসেছিল বাংলাদেশের। আরেকটি জয়ের জন্য ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয় তাদের। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জিতে দেড় দশকের বেশি সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটানোর পর থেকে উড়ছে স্বাগতিকরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে জয়ের পর একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও জেতে বাংলাদেশ। তবে টেস্টে অতিথিদের হারানো কঠিনই হবে মুশফিকদের জন্য। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে চার নম্বরে থাকা দলটি এই সংস্করণে স্বাগতিকদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।

টেস্টে বাংলাদেশের ৭ জয়ের শেষ তিনটিই এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের সিরিজে। ৩-০ ব্যবধানে জেতা সেই সিরিজে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা পাকিস্তানের বিপক্ষেও দেখতে চান বাংলাদেশের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে।

খুলনায় আগের টেস্টে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিকরা। সেই ম্যাচে শতক করেছিলেন তামিম ইকবাল ও সাকিব। ১৬২ রানে জেতা সেই ম্যাচে প্রথম স্পিনার হিসেবে শতক ও ১০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান সাকিব।

স্বাগতিকদের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে হবে আইসিসির টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা সাকিবকেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর থেকে কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেননি এই বাঁহাতি স্পিনার। তিনি যত দ্রুত ছন্দে ফিরবেন, ততই ভালো হবে দলের জন্য।

বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেনকে সঙ্গে পাবেন সাকিব। টেস্টে যত সময় গড়াবে, স্পিনারদের ভূমিকা তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

রুবেল হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় পেসার হিসেবে খেলতে পারেন শাহাদাত হোসেন।

টেস্টে ছন্দেই আছেন তামিম ও ইমরুল কায়েস। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের শেষ টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শতক পেয়েছিলেন এই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ভালো শুরুর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন মুশফিক।

ওয়ানডে দলে জায়গা হারালেও টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা হয়ে আছেন মুমিনুল হক। ১২ টেস্ট খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের গড় ৬০ এর ওপরে। পাঁচ দিনের ম্যাচে এই তরুণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  

বড় সংগ্রহের জন্য মাহমুদউল্লাহ, সাকিব ও মুশফিকের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে সাত নম্বরে শুভাগত হোম চৌধুরীর জায়গায় খেলতে পারেন সৌম্য সরকার। টি-টোয়েন্টির পর এবার টেস্টেও অভিষেক হতে পারে তরুণ সৌম্যর। 

মুশফিক মনে করেন, খুলনা টেস্টের প্রথম দুই দিন ব্যাটিং সহায়ক থাকবে।

“খুলনার উইকেটে রান করাটা খুব কঠিন। এটা ঢাকার মতো না; দ্রুত রান তোলা যায় না। কালকের (মঙ্গলবার) প্রথম সেশনটা দেখলে হয়তো বোঝা যাবে।”

ম্যাচ জিততে সতীর্থদের ওপর আস্থা রাখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার ও বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য তার দলের আছে বলে মনে করেন মুশফিক।

ইউনুস খান ও মিসবাহ-উল-হকের উপস্থিতিতে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ খুব শক্তিশালী। গত বছর পাঁচটি টেস্ট শতক করা ইউনুস ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন দুই দলের মধ্যে। পাকিস্তানের এই দুই ব্যাটিং ভরসাকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করতে চান বাংলাদেশের অধিনায়ক।

ছন্দে থাকা আজহার আলিও হতে পারেন বড় বাধা। বাংলাদেশ সফরে সময়টা ভালো না কাটলেও মোহাম্মদ হাফিজের ওপর আস্থা রাখছে অতিথিরা।

উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সামি আসলামের অভিষেক হতে পারে মঙ্গলবার। মিডলঅর্ডারে আসাদ শফিক ও সরফরাজ আহমেদের ফেরা প্রায় নিশ্চিত। দুই জন করে পেসার ও স্পিনার নিয়ে খেলবে পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত অনুজ্জ্বল ওয়াহাব রিয়াজ ও জুনায়েদ খান খেলতে পারেন প্রথম টেস্টে।

স্পিন আক্রমণে সাইদ আজমলের সঙ্গী হতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার জুলফিকার বাবর। সেক্ষেত্রে অপেক্ষায় থাকতে হবে লেগস্পিনার ইয়াসির শাহকে।