বন্ধুর ছোঁয়ায় হৃদয়ে দোলা

পুরনো দিনের বন্ধুকে পেয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা, এরপর প্রাণ খুলে আড্ডা, গান আর নৃত্যেম তাল মিলিয়ে গড়ালো বেলা-এভাবেই শুক্রবার পার করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যা্লয়ের রোকেয়া হলের কয়েকশ সাবেক ছাত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2016, 08:44 AM
Updated : 25 Nov 2016, 08:09 PM

রোকেয়া হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে চতুর্থ পুনর্মিলনীতে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যােলয়ের পাঠ চুকিয়ে কর্মস্থলে যাওয়া নারীদের প্রাণবন্ত পদচারণার পাশাপাশি দেখা যায় কয়েক দশক আগে হল ছেড়ে দাদি-নানি হওয়া শেষ বয়সীদের উচ্ছলতা।

শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যািলয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন।

এরপর যাদু প্রদর্শনী, নৃত্যনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্মৃতিচারণ আর আড্ডায় কাটে রোকেয়া হলের সাবেক শিক্ষার্থীদের দিন।

পুনর্মিলনীর উদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথি হিসেবে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ।

পুরনো বন্ধুকে পেয়ে মায়ের আনন্দের সঙ্গী মেয়েও। ছবিটি শুক্রবার টিএসসিতে রোকেয়া হলের সাবেক ছাত্রীদের পুনর্মিলনীর। ছবি: আব্দুল মান্নান

মোবাইলের ক্যামেরায় স্মৃতি ধরে রাখা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সাবেক ছাত্রীদের পুনর্মিলনীর ছবি। ছবি: আব্দুল মান্নান

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রোকেয়া হলের সাত প্রাক্তন শিক্ষার্থী- বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী সাঈদা খানম, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ফাহমিদা খাতুন, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, ক্রীড়া সংগঠক রাফিয়া আক্তার ডলি, সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, এ ধরনের সম্মিলনে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের মধ্য  দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যায়। অ্যা লামনাইরা এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।

“আলোকিত ভুবন চাই আমরা। আপনারা যেখানে উপস্থিত থাকেন সেই জায়গাটা আলোকিত হয়ে ওঠে। এখন আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে বিশেষ কিছু গোষ্ঠী দেশকে অন্ধকার করার চেষ্টা করছে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসার কথা থাকলেও তারা মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত করছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে; মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে, তাদের জন্য সহানুভূতি থাকতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শুক্রবার রোকেয়া হলের চতুর্থ পুনর্মিলনীতে এসে হাসি, আনন্দ আর গানে মাতেন সাবেক ছাত্রীরা। ছবি: আব্দুল মান্নান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শুক্রবার রোকেয়া হলের চতুর্থ পুনর্মিলনীতে এসে হাসি, আনন্দ আর গানে মাতেন সাবেক ছাত্রীরা। ছবি: আব্দুল মান্নান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে এই রোকেয়া হলেরই ছাত্রী ছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তার আদর্শ অনুসরণ করতে সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য।

প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, “দেশের নারী শিক্ষা প্রসারে এবং আর্থ সামজিক সকল স্তরে এ হলের ছাত্রীদের ভূমিকা অনন্য। আমি নিজেও রোকেয়া হলের প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে গর্ববোধ করি।”

হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. রওশন আরা ফিরোজের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম বেগম ও অধ্যাপক সালমা আখতার।

এরপর শুরু হয় স্মৃতিচারণা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতারী মমতা বলেন, “এই হল আমার প্রাণ, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার পরিচয়।

“আমরা পাঁচ বোন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। আমরা বেইলি রোড়ে থাকতাম, দৌড়ে ক্যাম্পাসে চলে আসতাম। এখনকার মতো কোনো ছেলে উত্ত্যঁক্ত করার সাহস পেত না। কোনো ভয় ছিল না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শুক্রবার রোকেয়া হলের চতুর্থ পুনর্মিলনীতে এসে হাসি, আনন্দ আর গানে মাতেন সাবেক ছাত্রীরা। ছবি: আব্দুল মান্নান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শুক্রবার রোকেয়া হলের চতুর্থ পুনর্মিলনীতে এসে হাসি, আনন্দ আর গানে মাতেন সাবেক ছাত্রীরা। ছবি: আব্দুল মান্নান

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম রোকেয়া হলে উঠেছিলেন ১৯৮১ সালে।

“হলের দিনগুলি অনেক মধুর ছিল। বিশেষ করে রান্না করে সকলে মিলে খাওয়ার সময়।”

হলের বান্ধবীদের মুখের ‘নাসিম’ ডাকের কথা এখনও ভুলতে পারেননি নাসিমা বেগম।

স্মৃতিচারণা শেষে মঞ্চ থেকে নিচে নামার সময় নাসিমা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে ক্যা মেরাবন্দি হন তিন বন্ধু রিও, খুকু, নুরু।

নাসিম, রিও, খুকু ও নুরু নামেই নিজেদের মধ্যো পরিচিত ছিলেন তারা।

“সেই নামগুলো আজ আমাদের নিকট স্মৃতির অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে। আজ এখানে এসে কত ভালো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না,” বলেন তাদের একজন।

সহিফা বান ইভা ১৯৮৫ সালের ছাত্রী, এখন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব ভালো লাগছে এই আনন্দঘন মুহূর্ত। বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে, মনে পড়ছে সেই পুরনো হলের স্মৃতিগুলো, সেগুলো আজ মনে দোলা দিচ্ছ।”

মোবাইলের ক্যামেরায় স্মৃতি ধরে রাখা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সাবেক ছাত্রীদের পুনর্মিলনীর ছবি। ছবি: আব্দুল মান্নান

মোবাইলের ক্যামেরায় স্মৃতি ধরে রাখা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সাবেক ছাত্রীদের পুনর্মিলনীর ছবি। ছবি: আব্দুল মান্নান

পুনর্মিলনীর বিকালের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শিল্পীর সঙ্গে গানে কণ্ঠ মেলাতে দেখা যায় তাকে।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর পর ১৯৩৮ সালে ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হয় ছাত্রী হোস্টেল চামেলী হাউজ। ১৯৫৬ সালে এর নাম হয় উইমেন্স হল। এই ছাত্রী হোস্টেলই ১৯৬৪ সালে রোকেয়া হল নাম পায়।