নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
Published : 25 May 2015, 05:24 PM
সমিতির প্রথম সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন; আর সহ সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্বে থাকা মাহাবুবুল আলম।
সোমবার সংগঠনের তিন শীর্ষ পদের এ নির্বাচনে কেবল তিনজনই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তারা তিনজনই সমিতির পরিচালনা পর্ষদে এসেছেন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে মনোনীত পরিচালক হিসাবে।
বিকালে এফবিসিসিআই ভবনে বোর্ড সভায় বসেন নব নির্বাচিত ৫২ পরিচালক। এরপর নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে তিন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আলী আশরাফের কাছে।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আলী আশরাফ তিন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে সাংবাদিকদের বলেন, “আর কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হল।”
এর আগে শনিবার এফবিসিসিআই‘র পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ৩২টি পরিচালক পদের ২৫টি জিতে নেয় মাতলুব আহমাদ নেতৃত্বাধীন ‘ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদ’।
ফলে রাজশাহী চেম্বার থেকে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মনোনীত মাতলুবই যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতৃত্বে আসছেন, তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল।
একইভাবে বিজিএমইএ’র মনোনীত পরিচালক হিসাবে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ সভাপতি এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রতিনিধি হিসাবে মাহাবুবুল আলম সহ সভাপতি পদে এসেছেন।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাতলুব আহমাদ ব্যবসায়ী মহলে প্রধানমন্ত্রীর ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ হিসাবে পরিচিতি। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীদের মধ্যে মাতলুবও ছিলেন।
৬৩ বছর বয়সী মাতলুবের প্রতিষ্ঠান নিটল মোটরস ১৯৮১ সালে একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ভারতের টাটা মোটরসের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে বিক্রি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
পরে দুই ছেলের নামে মাতলুব তার প্রতিষ্ঠানের নাম দেন নিটল-নিলয় গ্রুপ। বর্তমানে সিমেন্ট, কাগজ, চিনি, প্লাস্টিক, পর্যটন ও বীমাসহ বিভিন্ন খাতে এ গ্রুপের দশটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মাতলুবের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি অক্সফোর্ড থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছেন। তার স্ত্রী সেলিমা আহমাদ দীর্ঘদিন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতৃত্বে ছিলেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসাবে গতবছর ‘অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড’ পান নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা।
এবারের নির্বাচনে চেম্বার গ্রুপ থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন-আমিনূল হক শামীম, দিলীপ কুমার আগারওয়াল, গাজী গোলাম আশরিয়া, শেখ ফজলে ফাহিম, নিজাম উদ্দিন, মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রবীর কুমার সাহা, নূরুল হুদা মুকুট, হাসিনা নেওয়াজ, নাগিবুল ইসলাম দিপু, মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো ও রেজাউল করীম রেনজু।
এছাড়া ১৬তম পরিচালক পদে সমান ভোট পেয়ে কোহিনুর ইসলাম ও মো. মাসুদ নির্বাচিত হয়েছেন।
চেম্বার গ্রুপ থেকে মনোনীত পরিচালকরা হলেন- বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ইসমাইল হোসেন, বরিশাল চেম্বার থেকে সাইদুর রহমান রিন্টু, চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে মাহবুবুল আলম, ঢাকা চেম্বার থেকে বেনজীর আহমেদ, ঢাকা ওমেন চেম্বার থেকে নাজ ফারহানা আহমেদ, খুলনা চেম্বার থেকে কাজী আমিনুল হক, মেট্রোপলিটন চেম্বার থেকে কামরান টি রহমান, রাজশাহী চেম্বার থেকে আবদুল মাতলুব আহমেদ, রংপুর চেম্বার থেকে মোসাদ্দেকুর হোসেন বাবলু ও সিলেট চেম্বার থেকে শামীম আহমেদ।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচিতরা হলেন, মো. হেলালউদ্দিন, নাজিমউদ্দিন রাজেশ, হারুণ অর রশিদ, শামীম আহসান, আবু মোতালেব, হাবিবউল্লাহ ডন, কে এম আখতারুজ্জামান, সোয়েব চৌধুরী, মুনতাকিম আশরাফ, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, হায়দার ও শফিকুল ইসলাম ভরসা।
অ্যাসোসিয়েমন গ্রুপ থেকে মনোনীতরা হলেন- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের নজরুল ইসলাম মজুমদার, বায়রার মনসুর আহমেদ কালাম, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির এস এম শফিউজ্জামান, ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এস এম আমজাদ হোসেন, বিজিএমইএর সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের শেখ কবির হোসেন, বিকেএমইএর এ কে এম সেলিম ওসমান, প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোরর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মো. জসিম উদ্দিন, বিটিএমএর তপন চৌধুরী ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মোহাম্মদ শামস-উজ-জোহা।
নির্বাচিতরা মূল নেতৃত্বে না আসায় ক্ষোভ
সারা দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত পরিচালকদের একজনও এফবিসিসিআইর মূল নেতৃত্বে (সভাপতি ও সহ-সভাপতি) না আসায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এবারের সভাপতি মাতলুব আহমদ রাজশাহী চেম্বারের, প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে মনোনীত পরিচালক।
২৮ মে দায়িত্ব নিতে যাওয়া এই তিন জনের কেউই সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত নন। যে ২০ জন মনোনীত পরিচালক, এরা তাদের মধ্যে।
এফবিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদে মোট ৫২ জন সদস্য থাকেন। এদের মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ১৬ জন করে মোট ৩২ জন নির্বাচিত হয়ে আসেন। আর ২০ জন আসেন দেশের গুরুত্বপূর্ন ১০টি চেম্বার ও ১০টি অ্যাসোসিয়েশন থেকে ১০ জন করে।
সোমবার দুপুরে মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচনের পর অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
সরাসরি ভোটে নির্বাচিত পরিচালকদের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, আমাদের ৩২ জনের একজনও সভাপতি, সহ-সভাপতি হতে পারল না, এটা দুঃখজনক।
মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বাধীন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ভোটে নির্বাচিত পরিচালক শোয়েব চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটে নির্বাচিত ৩২ জন পরিচালকের একজনও মূল নেতৃত্বে না আসাটা দুঃখজনক। এভাবে অনির্বাচিত পরিচালকরা এফবিসিসিআইয়ের মূল নেতৃত্বে আসায় এবং নির্বাচিতরা বঞ্চিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
তার মতো অনেকেরই প্রশ্ন- যারা নির্বাচন করেনি, ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়নি তারা সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থের বিষয়ে কতটা দায়বদ্ধ হবে?
এফবিসিসিঅইয়ের গত কয়েকটি পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালকরাই নেতৃত্বে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটিকে সরকার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করায় সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত পরিচালকরা নেতৃত্বে আসতে পারছেন না বলে অভিযোগ আছে ব্যবসায়ী মহল থেকেই।
বিদায়ী সভাপতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস থেকে মনোনীত হয়ে এসেছিলেন। তিনি স্টান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
এর আগের মেয়াদে এ কে আজাদ এসেছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে। তারও আগে এই সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা উত্তরের বর্তমান মেয়র আনিসুল হক। তিনিও এই সংগঠনে আসেন বিজিএমইএর মনোনীত পরিচালক হিসেবে।