গরু আসা কমেছে, তাই মাংসের দাম চড়া

ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় বেনাপোল সীমান্তের হাট-বাজারগুলোতে মাংসের দাম বেড়ে গেছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 01:56 PM
Updated : 29 March 2015, 03:59 PM

স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে গত তিন মাসে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরের গরুর মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।

এ ব্যাপারে খুলনা ২৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পুটখালি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার সামছুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএসএফ আসতে দিচ্ছে না বলে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ রয়েছে।

ওপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় গরু পাচার ঠেকাতে সাম্প্রতিক সময়ে পুটখালির বিপরীতে বিএসএফ তাদের জনবল কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। তারা সীমান্ত এমনভাবে পাহারা দিচ্ছে যাতে একটি গরুও এপারে না আসে।

তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে বিএসএফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায় যে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা গরু আসতে দিচ্ছে না।

গরু পাচার ঠেকানোর জন্যই বিএসএফের জনবল বাড়ানো হয়েছে। সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে তারা আর বাধা দেব না বলে বিজিবিকে জানিয়েছে, বলেন সামছুর রহমান।

যশোরের শার্শার নাভারনের গরুর মাংসের বাজার ‘স্বাস্থ্যসম্মত মাংস ঘর’র মালিক ইন্তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সীমান্তের পশু হাটগুলোতে যে গরু ও মহিষ বিক্রি হয় তার শতকরা নব্বই ভাগই ভারতীয়।

তিন মাস ধরে ভারতীয় গরু-মহিষ আসা কমে যাওয়ায় খাটাল কিংবা পশুহাটে ওপারের গরু পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পশু হাটে এখন এপারের গরুই বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে গরুর বাজার খুব চড়া।

চড়া দামে গরু কিনে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে বলে মাংসের দামও চড়া বলে দাবি করেন তিনি।

ইন্তাজুল আরও জানান, আগে প্রতিদিন ৭-৮টা গরুর মাংস বিক্রি হলেও এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩-৪টিতে।

দাম চড়া হওয়ায় মাংস বিক্রিও কমেছে বলে মনে করেন তিনি।

বাগআচড়া বাজারের মাংশ ব্যবসায়ী উসমান আলি সাহাজী বলেন, তিন মাসে তাদের মাংস বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। আগে প্রতিদিন ৬ মন মাংস বিক্রি হলেও দাম বাড়ার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ মনে।

জামতলার ক্ষুদ্র মাংস ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, ভারতীয় গরু না আসায় ছোট ছোট মাংস ব্যবসায়ীরা এখন বাজার থেকে গরু কিনতে পারছেন না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা দুতিন জন মিলে একটি গরু কিনে মাংস বানিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট বাজারে বিক্রি করছেন।

এই অবস্থা চলতে থাকলে বাপদাদার আমলের এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে আশংকা করছেন কামরুল।

কামরুল জানান, তিন মাস আগেও প্রতিদিন একটি করে গরুর মাংস বিক্রি করতেন তিনি। অথচ এখন প্রতিদিন দুই-তিন জনে মিলে বিক্রি করছেন একটি গরুর মাংস। এছাড়া বাকি বিক্রি তো রয়েছেই।

নাভারনের ‘ভাই ভাই মাংস ঘর’ এর মালিক মশিয়ার রহমান ও লালন হোসেন জানান, মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের মাংশ বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে।

আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫ মন মাংস বিক্রি করতেন, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭-৮ মনে, বলেন তিনি।

নাভারন গবাদি পশু শুল্ক করিডোরের রাজস্ব কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নাভারনে গেল বছর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ তিন মাসে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৮টি পশু এসেছিল। অথচ চলতি বছরের একই সময় ওপার থেকে এসেছে মাত্র ৩৭ হাজার ৪৮৭টি পশু।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে গরু আসা একেবারেই কমে গেছে।

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ৮ হাজার ৭০০ গরু এবং মার্চে এসেছে ২ হাজার ৭৯২। অথচ গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গরু এসেছিল ৪৬ হাজার ২১টি, আর মার্চে এসেছিল ৪২ হাজার ২১৫টি।”

পুটখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফ্ফার সরদার জানান, জানুয়ারির শেষের দিকে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার পর ওপারের গরু আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

ইতিপূর্বে মাঝে-মধ্যে গরু আসা বন্ধ হলেও তা ২-৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এবার ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লী বিধানসভার নির্বাচন শেষ হলেও গরু আসা এখনও শুরু হয়নি।

তবে, বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাপথে অল্প সংখ্যক গরু আসছে বলে জানান তিনি।

আব্দুল গফ্ফার আরও জানান, বেনাপোল সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মতো এলাকার প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ৫ হাজার যুবক ভারত থেকে গরু পারাপারের কাজ করে।

ওপার থেকে বাংলাদেশের মালিকের কাছে একটি গরু পৌঁছে দিতে পারলে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া যায় বলে জানান গফফার।