একে তো শীত অনুষ্ঠানের মওসুম, তার ওপর সামনেই একুশে ফেব্রুয়ারি, বসন্ত বরণ উৎসব; ফলে এই সময়েই ফুল বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি।
Published : 09 Feb 2015, 10:24 AM
এবার ফুল চাষও ভালো হয়েছে বলে জানালেন যশোরের চাষিরা। কিন্তু ফুলের সেই হাসি ফুটছে না চাষিদের ঠোঁটে, কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা।
১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা নিয়ে চাষে নেমেছিলেন যারা, সেই টানা অবরোধে সেই সাড়ে ৪ হাজার চাষি এখন চোখে সর্ষেফুল ফুল দেখছেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিমের কথায়, “এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন হয়েছে আশানুরূপ। এই অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে দেখা দিয়েছিল হাসির ঝিলিক। কিন্তু অবরোধ-হরতালে সেই হাসির ঝিলিক আজ ম্লান হতে চলেছে।”
সরকার পতনের আন্দোলনে নামা বিএনপি জোটের ডাকে গত এক মাস ধরে চলা অবরোধে নাশকতায় সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল নেই স্বাভাবিক, বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হচ্ছে না।
রহিম বলেন, “প্রতিবছরের এই সময় সারাদেশের পাইকাররা গদখালী বাজারে ফুল কিনতে আসে, কিন্তু এবার পাইকারদের দেখা নেই।
“এই সময় প্রতি দিনের বেচাবিক্রি অর্ধ কোটি টাকার ওপরে হলেও এখন লাখ টাকার বিক্রিও মনে হচ্ছে অনেক।”
ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি জানান, সারাদেশে বসন্তবরণ উৎসব, ভালোবাসা দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য যে ফুল বেচাকেনা হয়, তার প্রায় ৭৫ শতাংশই যায় যশোর থেকে।
প্রতি বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে পুটাপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম চার বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন।
তার প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। এখন একদিন পরপর ওই ফুল তুলতে হচ্ছে, কিন্ত হরতাল-অবরোধে ক্রেতা না পেয়ে হতাশ কাশেম।
“এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে,” বলেন তিনি।
ঝিকরগাছা উপজেলার কাগমারি গ্রামের ফুলচাষী রকিবুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছর এই সময় ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের জোগান দিতে আমাদেরি হিমশিম খেতে হত। আর এবার লাখ লাখ ফুল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।”
শার্শার রাজনগরা গ্রামের ফুলচাষি সাইফুল আলম জানান, হিমাগারে ফুল রাখার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের লাখ লাখ টাকার ফুল ফেলে দিতে হচ্ছে।
“এ এলাকার মানুষ ধানের বিকল্প হিসেবে এতদিন ফুল চাষ করছিল। আজ চোখের সামনে ফুল নষ্ট হতে দেখে পেশা বদলের চিন্তা করছে।”
ঝিকরগাছার নন্দী ডুমুরিয়া গ্রামের ফুলচাষি গোলাম রসুল ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসের পাশাপাশি ‘জারবেরা’ ফুল চাষ করেছেন।
আবহাওয়া ভালো থাকায় বাগানে অন্যবারের চেয়ে বেশি ফুল হয়েছে। ফুল বিক্রি করে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা লাভের আশা করছিলেন রসুল, কিন্তু সেই আশায় এখন গুঁড়েবালি পড়েছে।
তিনি বলেন, “চাহিদা বেশি থাকায় দামি এই ফুলটি চাষ করেছিলাম, এখন তো বেকায়দায় পড়েছি। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাই ঘরে তোলা দায়।”
ফুলচাষি ফজলুর রহমান জানান, যশোরে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, ক্যালেন্ডেলা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১৫ জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শার্শা, বেনাপোল, ঝিকরগাছার ৬০টি গ্রামে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে এবার ফুলের আবাদ হচ্ছে। আর চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ৫ হাজার কৃষক।
গদখালী বাজার ঘুরে দেখা যায়, জারবেরা ফুলের প্রতিটি স্টিক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৫ টাকা। তেমনি ৫ থেকে ৮ টাকায় গোলাপ এখন ২ টাকায়, ৭ থেকে ১২ টাকার গ্লাডিওলাস ৫ টাকায়, রজনীগন্ধা দেড় থেকে দুই টাকায়, গাঁদা প্রতি হাজার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গদখালী বাজারে ফুল কিনতে আসা পিরোজপুরের ব্যবসায়ী তওফিক এলাহী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে “হরতাল-অবরোধে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে তিনগুণ, আবার ক্রেতাও নেই।”
গোলাপ ও গাঁদা অনেক কৃষক স্তূপাকারে জমিয়ে রেখেছেন। তাদের আশা, যদি অবরোধ উঠে যায়, তবে কিছুটা হলেও দাম পাবেন।