বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর চালের বাজারে। অবরোধ শুরুর পর সপ্তাহখানেক বাজার স্থিতিশীল থাকলেও গত কয়েক দিনে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
Published : 23 Jan 2015, 02:45 PM
সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, মূলত গত সোমবার থেকে চালের দাম বাড়ছে রাজধানীতে। গত এক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত ১ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অবশ্য বাজার ঘুরে সব ধরনের চালই আগের চেয়ে কেজিতে দুই টাকা বেশিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালোমানের প্রতিকেজি নাজিরশাল, মিনিকেট ৫৫-৫৭ টাকা আর সাধারণ মানের একই চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাঝারি মানের প্রতিকেজি বিআর-২৮ ধানের চাল ৪০-৪৫টাকা, লতা ও পাইজাম ৩৮-৪৪ টাকা এবং স্বর্ণা, চায়নাসহ মোটা চাল ৩৫-৩৭ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
অবরোধের কারণে কৃষক পর্যায় থেকে চালকলে ধান আনা এবং চালকল থেকে পাইকারী বাজারে চাল পৌঁছানোর ব্যয় বেড়ে যাওয়াকেই দাম বাড়ার মূল কারণ হিসাবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় অনেক মালিক ট্রাক চালানো বন্ধ রেখেছেন। অনেকে রাজি হলেও সেজন্য গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। কৃষক পর্যায় থেকে ধানের সরবরাহও কমে গেছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে চালের দামে।
এছাড়া মৌসুম শেষ হওয়ায় ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতিদিন দেড় হাজার টনের বেশি চালের চাহিদা রয়েছে, যার সিংহভাগই আসে নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া ও জয়পুরহাট থেকে।
অবরোধ শুরুর আগে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ট্রাকে চাল আসত রাজধানীতে। অবরোধের কারণে তা অনেক কমে এসেছে।
আগে এক ট্রাক চাল দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আনতে খরচ পড়ত ১৮ হাজার টাকা। এখন ৩০-৩৫ হাজার টাকায় গেছে বলে মানিকনগরের শমসের রাইস এজেন্সির মালিক হাসান জাকির জানিয়ছেন।
আবরোধে ধান থেকে চাল তৈরিও ব্যাহত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম খান জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একদিকে অবরোধ ও মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে ধানের সরবরাহ কমেছে, বেড়েছে দামও। আর নিরাপত্তাহীনতায় বেড়েছে পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় চালের দামও কিছুটা বাড়ছে।”
আগে যেখানে এক ট্রাক ধান ১৫ হাজার টাকার মধ্যে মিলে আনা যেত, এখন সেখানে ২০-২৫ হাজার টাকা লাগছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে মূলত সরবরাহ কমে যাওয়া এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে মনে করছেন বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী।
একই কথা বলেছেন দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান পাটোয়ারি মোহন।
“ধানের দাম বাড়লেও মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়েনি। তবে ঢাকা বা অন্য যেসব এলাকার ব্যবসায়ীরা চাল নিয়ে যান তাদের খরচ বেড়েছে। আগে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৭-১৮ হাজার টাকা। এখন ৩০-৩৫ টাকায়ও ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না,” বলেছেন তিনি।
অবরোধের মধ্যে যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাকেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। আর এটাই এখন সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, “সবচেয়ে বড় ভয় আগুনের। চালের গাড়িতে আগুন দিলে ব্যবসায়ীদের কিছু থাকবে না। এজন্য ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। ফলে বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম। এছাড়া পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে।”