প্রায় দুই সপ্তাহের টানা অবরোধে দেশে ভোগ্য পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা।
Published : 16 Jan 2015, 11:55 AM
মহাসড়কে পণ্য সরবরাহকারী যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
এ পরিস্থিতিতে রাজধানী বা রাজধানীর বাইরে সড়ক পথে কোনো পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবরোধের মধ্যে শুধু নদী পথে কিছু পণ্য সরবরাহ হচ্ছে। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।”
পণ্য সরবরাহ ঠিক না থাকায় মজুদ বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদও বেশি টাকা গুণতে হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ২৮০০ থেকে ২৯০০ টন চিনি সরবরাহ করতেন তারা। এখন তা নেমে এসেছে ১২০০ টনে।
একইভাবে সয়াবিন ও পাম অয়েল মিলিয়ে প্রতিদিন ১২০০ টন সরবরাহের বিপরীতে বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ৩০০ টন সরবরাহ হচ্ছে। ৫০০ টন আটার সরবরাহ নেমে এসেছে ১০০ টনে।
একইভাবে সরবরাহ সমস্যার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী।
জয়পুরহাটের এই ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের প্রধান প্রধান মোকামগুলো এখন অলস সময় কাটাচ্ছে। দেশের ১৭ হাজার চালকলের ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। আর জয়পুরহাটের ৮০ শতাংশ মিল বন্ধ।
“সরবরাহ একদম নেই। কোনো ট্রাক চাল লোড করতে চাচ্ছে না। আবার ক্রেতারাও আসছেন না। আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে। ব্যবসা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
গত ১০ দিনে চালের দামের কোনো হেরফের না হলেও বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ধানের দাম প্রতি মণে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান লায়েক আলী।
চলমান অবরোধে দিনাজপুরে অন্তত পাঁচটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি আলু বহনকারী ট্রাকও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই কয়দিনের অবরোধ ও হরতালে ৭০টি গাড়ি পোড়ানো ছাড়াও ৩৫০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতউল্লাহ খন্দকার জানিয়েছেন।
আর তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন মালিকদের এই নেতা।
টিসিবির হিসেবে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, ডাল, মুরগি, গরুর মাংস ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
এছাড়া বেড়েছে দুধসহ বিভিন্ন শিশু খাদ্যের দাম। পাবনা-সিরাজগঞ্জ এলাকায় দুধ সংগ্রহ করতে পারছে না পাস্তুরিত তরল দুধ বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো। কমে গেছে দুধের সরবরাহ।
তবে রাজধানীতে এখনও সব্জির বাজার আগের মতোই রয়েছে।
এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সিলেটে চলছে জ্বালানি তেলের সংকট। ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার খবর এসেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সময়মত রপ্তানি পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না বলে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
এজন্য চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে পোশাক শিল্পে ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বিজিএমইএ নেতারা বলেছেন।
ডিসকাউন্ট, এয়ার শিপমেন্ট ও অর্ডার বাতিল হওয়ায় এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম।
এদিকে বৃহস্পতিবার ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াব এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত সংখ্যক পর্যটক পাচ্ছেন না তারা।
সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে চলতি বছর পর্যটন মৌসুমে তাদের ক্ষতির পরিমাণ ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন এই শিল্পের ব্যবসায়ীরা।