এবার তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ কোর্স শুরুর ঘোষণা দিয়েছে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স।
Published : 24 Nov 2014, 10:08 PM
এর আগে অ্যালায়েন্স জোটভুক্ত ক্রেতারা যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি পোশাক কেনেন কেবল সেই সব কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের জন্য অগ্নি প্রশ্ক্ষিণ কর্মসূচি চালু করেছে অ্যালায়েন্স। নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণ ওই কর্মসূচিরই সম্পূরক হিসাবে শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন’র নির্দেশনা মেনে তৈরি করা এই কোর্সে পোশাক কারখানার নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের জরুরী প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দেবার সক্ষমতা তৈরি করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
কারখানা ব্যবস্থাপকদের জন্যও প্রশিক্ষণে অধিবেশন রয়েছে বলে জানায় অ্যালায়েন্স।
তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সাবিনা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যিনি দুই বছর আগের ওই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন।
সাবিনা বলেন, “ঘটনার সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের নিচের গেট বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছিল আর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হযেছিল। আমার শুধু মনে হয়েছিল আমার মেয়েটার কী হবে? একটি ছেলে জানালা আমাদের ফ্লোরের একটি জানালা ভেঙে ফেললে সেটি দিয়ে লাফিয়ে পড়ে হাতে ও বুকে ব্যথা পেয়েছিলাম ।
“তারপর গ্রামে গিয়ে ৬/৭ মাস বাসায় ছিলাম । এখন যেখানে কাজ করি তার পরিবেশ বেশ ভালো । অ্যালায়েন্স থেকে আমাদের যেসব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল তার কারণে আমরা জানি আগুন লাগলে কী করতে হবে বা কোন তার ছেঁড়া থাকলে কী করতে হবে।”
তিনি মালিকপক্ষকে দুর্ঘটনার সময় বেরোনোর পথে তালা না দেওয়ার অনুরোধ করেন।
অ্যালায়েন্স জানায়, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি দিয়ে নিরাপত্তা সেবাদানকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান জি ফোর সিকিউরিটিজের সাহায্যে নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডেভিড গোল্ড এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাঠক্রম তৈরি করেছেন যা ইন্সটিটিউশন অফ অকুপেশনাল হেলথ অ্যান্ড সেফটি থেকে অনুমোদিত।
তবে ইউরোপের তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড ও শ্রমিক ইউনিয়নের জোট অ্যাকর্ডের মতো অ্যালায়েন্সের কোন অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জামকারীদের তালিকা তৈরি ও সরবরাহের পরিকল্পনা নেই।
অ্যালায়েন্সের উপদেষ্টা ইয়ান স্পোল্ডিংকে সংবাদ সম্মেলনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রশ্ন করলে তিনি তার জবাবে বলেন, “যখন আমরা অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামের প্রদর্শণী শুরু করেছিলাম তার একটি উদ্দেশ্য ছিল কারখানা মালিকদের জানানো কোন ধরনের সরঞ্জাম দেশে পাওয়া যায় আর কোন ধরণের সরঞ্জাম দেশের বাইরে থেকে কিনতে হবে।
“আমরা যখন অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামের প্রদর্শনী শুরু করেছিলাম তখন এসবের ওপর উচ্চ শুল্ক ছিল। আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশ সরকার অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামের উপর শুল্ক ব্যাপকভাবে কমিয়েছে।”
তিনি বলেন, “ইউ এল অথবা এফ এম গ্লোবাল অনুমোদিত বা একই মানদণ্ডের অগ্নি প্রতিরোধক দরজা বাংলাদেশে তৈরি হয়না। আমরা অ্যালায়েন্সের হয়ে চেষ্টা করছি যেন দেশের ভেতর এসব অনুমোদিত দেশি ও বিদেশি অগ্নি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের সরবরাহ বাড়ে। বার্ষিক প্রদর্শনী আয়োজনের এটি হচ্ছে আরেকটি উদ্দেশ্য।
“কিন্তু আমরা কারখানাগুলোকে এসব পণ্য উৎপাদকদের কোন তালিকা ধরিয়ে দিচ্ছি না। কারখানাগুলো চাইছে আমরা যেন এরকম একটি তালিকা তৈরি করি। কিন্তু আমরা চাই দেশের ভেতরে বা বাইরের যে কোন উৎপাদক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সনদ নিয়ে এসব পণ্য উৎপাদন করুক।”
জি ফোর সিকিউরিটিজের মানবসেবার প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সেলিম আখতার খান বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট কারিগরি মানদণ্ডের ওপর জোর দিচ্ছি, কোন উৎপাদকের তালিকার ওপর নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যালায়েন্সের আবাসিক পরিচালক রবিন মেসবাহ।
নতুন এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বাইরেও অ্যালায়েন্স আগামী ৭-৯ ডিসেম্বর ভবন ও অগ্নি নিরাপত্তার ওপর দ্বিতীয় বার্ষিক কর্মসূচির আয়োজন করতে যাচ্ছে।
এছাড়া শ্রমিকদের ক্ষমতায়নে অ্যালায়েন্স ‘আমাদের কথা’ নামে একটি হেল্প লাইন চালু করেছে, যেখানে তারা পরিচয় গোপন করে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন। বর্তমানে ২৫০টি কারখানায় এ ধরনের ‘হেল্প লাইন’ চালু রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।