জিএসপি: শর্ত পূরণে অগ্রগতি ‘যথেষ্ট নয়’

শর্ত পূরণে কিছু অগ্রগতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার জন্য তা ‘যথেষ্ট নয়’ বলে মনে করছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়।

নিউজ ডেস্ক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2014, 04:56 AM
Updated : 12 Feb 2014, 05:03 AM

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে এক শুনানিতে দেশটির ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল লেবার এফেয়ার্সের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকা এরিক বিয়েল বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে।

“গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের জন্য যে কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী যথেষ্ট অগ্রগতি বাংলাদেশ দেখাতে পারেনি।” 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহাল হবে কিনা- সে বিষয়ে শুনানি হবে আগামী মে মাসে। তার তিন মাস আগেই মঙ্গলবার সিনেট কমিটি ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমঝোতা ও শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে এই আলোচনা হলো। 

ক্যাপিটল হিলের সিনেট ডার্কসেন ভবনে কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনদেজের সভাপতিত্বে এই শুনানিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রম পরিবেশের পাশাপাশি গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও তার পরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।

এরিক বিয়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, এলায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেইফটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এলেন টাউসার এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আকতার শুনানিতে অংশ নেন।

আশুলিয়ার আজরীণ ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১৩ শ’র বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে জানায়, কারখানা ভবনের কাঠামো ও অগ্নি নিরাপত্তা, কর্ম পরিবেশের উন্নতি এবং শ্রমিকদের সংগণকরার সুযোগসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ১৬টি শর্ত পূরণ হলে তবেই এ সুবিধা ফেরত দেয়া হবে।

 

এরকি বিয়েল বলেন, এই কর্মপরিকল্পনার কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে বলে তারা দেখতে পাচ্ছেন। 

“তবে কর্মপরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে এখনো অনেক কাজ করতে হবে, যা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে।” 

তিনি বলেন, কারখানারগুলোর জন্য প্রশিক্ষিত অগ্নি ও ভবন পরিদর্শক নিয়োগের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ যাতে এ বিষয়গুলো এগিয়ে নেয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।   

শুনানিতে বিয়েল বলেন, শর্ত পূরণে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করলেও শ্রমিকদের সিবিএ করার ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করসহ কর্মপরিকল্পনার কয়েকটি বিষয় আমলেই নেয়া হয়নি।   

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার শতাধিক ট্রেড ইউনিয়নকে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিলেও সেগুলো আদৌ মাঠে কার্যকর হবে কি-না যুক্তরাষ্ট্র সেদিকে নজর রাখবে বলেও জানান এই মার্কিন শ্রম কর্মকর্তা। তার মতে, বাংলাদেশের আগের ট্রেড ইউনিয়নগুলোও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধায় বাংলাদেশ যে পণ্য বিক্রি করত, তা দেশের ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ১ শতাংশের মতো। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশকে বড় ধরনের অসুবিধায় পড়তে না হলেও এর প্রভাব ইউরোপের ক্ষেত্রে পড়লে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিপর্যায়ের মুখে পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের অর্ধেকেরও বেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিক্রি হয়।