পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তদন্তে গঠিত কমিটি বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এসইসির অদক্ষতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি সংস্কারের সুপারিশ করেছে। বাজারে কারসাজির পেছনে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি তারা।
Published : 07 Apr 2011, 06:45 AM
বাজার থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তে পাওয়া গেছে জানিয়ে কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, তবে তা কোনোভাবেই বিএনপির দাবি করা ৮৪ হাজার কোটি টাকা নয়। এর পরিমাণ হতে পারে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর প্রতিবেদনের তদন্তের বিভিন্ন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খালেদ এ কথা বলেন।
প্রতিবেদনের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার জন্য বাজার সংশ্লিষ্ট অনেককে দায়ী করলেও কারো বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেনি কমিটি।
কমিটির প্রধান কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম বলেন, "বাজারে উত্থান-পতনের জন্য অনেকে দায়ী। এদের মধ্যে রয়েছেন শেয়ার ইস্যুয়ার, ইস্যু ম্যানেজার, ব্রোকার, ডিলার,,,,,ব্যবসায়ীরাও সুযোগ পেলে এ উত্থান-পতনে অংশ নেয়। এই উত্থান-পতন ঠিক হয়নি।"
"এ ক্ষেত্রে এসইসির পেশাগত দক্ষতা কাজ করেনি। কাজ করলে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। এসইসি দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলেই আমাদের মনে হয়েছে। তাদের পুনর্গঠন করতে হবে", বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (এসইসি) কমিশনের লোকবলের অভাবও তুলে ধরেন ইব্রাহিম। তিনি বলেন, লোকবল না বাড়ালে বড় মার্কেট রেগুলেট করা সম্ভব নয়।
কারসাজির জন্য দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, "এসইসিকে ঠিক না করে ওদের শাস্তি দিলে আবার একই ধরনের ঘটনা ঘটবে।"
তদন্ত কমিটি এসইসি পুনর্গঠনের সুনির্দিষ্ট করেছে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের সুপারিশও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাজারে কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে কি না- জানতে চাওয়া হলে ইব্রাহি বলেন, "কত লোক জড়িত, সে রকম কাউকে আইডেন্টিফাই আমরা করিনি, এভাবে ডিটেইল করা সম্ভবপর নয়।"
তবে বাজারে কারসাজির কিছু নমুনা পাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি। দুটি ঠিকানায় ১৯ জন লোকের ১৯ কোটি টাকা প্লেসমেন্ট বরাদ্দ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অসদুপায় হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
বাজার চাঙা করার ক্ষেত্রেও গ্র"প করে কোম্পানিগুলোর নিজেদের মধ্যে শেয়ার কেনা-বেচার তথ্য পাওয়া গেছে বলে ইব্রাহিম জানান।
এ সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব কাজ করেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখানে রাজনীতি ওয়ার্ক করেছে বলে মনে হয়নি। যারা করেছে, তারা ব্যবসায়ী। তবে যখন যে পাওয়ারে থাকেন, তখন অনেকে সে পাওয়ার কাজে লাগাতে পারেন। তবে পলিটিক্স কাজ করেছে বলে মনে করি না।"
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দাবি করে আসছে- পুঁজিবাজারে কারসাজির মাধ্যমে ৮৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
"এটা ফাও কথা। তবে কিছু টাকা মার্কেট থেকে বের হয়েছে। এটা ৪/৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে", বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান।
ডাইরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতির মাধ্যমে যে সব কোম্পানি বাজারে এসেছে, তাদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে টাকাগুলো ব্যক্তিদের পকেটে চলে গেছে বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।
টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না- জানতে চাওয়া হলে ইব্রাহিম বলেন, "একটি কোম্পানি আমরা পেয়েছি, যারা ১৫ কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এটি হলো জে এম গ্লোবাল। এর সঙ্গে একটি বাংলাদেশি কোম্পানিও রয়েছে, সেটি হলো থাই এলুমিনিয়াম।"
এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "এসইসিকে যদি সঠিক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করে তোলা হয়, তবে অবশ্যই যায়।"