দেশের সবচেয়ে বড় এই বেসরকারি ব্যাংকের ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সভা শেষে চেয়ারম্যান আরাস্ত খান জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের ইসলামী ব্যাংকে দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। কিন্তু থাকবেন একজন। তিনি আল রাজি গ্রুপের প্রতিনিধি ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-রাজি।
“অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ আর ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন না, ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর থাকবেন।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এই বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
এজিএমের নামে ‘নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে’ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত অপব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কিছু করার শক্তি না থাকলে সম্মানিত পরিচালকদের পর্ষদে থাকা অর্থহীন।”
তিন দিন আগেও আহসানুল আলম দাবি করেছিলেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্য তার পক্ষে রয়েছেন।
কিন্তু মঙ্গলবারের সাধারণ সভায় তিনি ছাড়া পরিচালনা পর্ষদের বাকি সব সদস্যই ছিলেন এবং তাদের উপস্থিতিতেই ওই সিদ্ধান্ত হয় বলে বোর্ডের আরেক সদস্য অধ্যাপক কাজী শহিদুল আলম জানান।
ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সিদ্ধান্ত হয়েছে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান ছাড়া অন্য কেউ ব্যাংকের বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। সে কারণে আমি কিছু বলতে পারব না।”
সৌদি আরবভিত্তিক ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এদিন সাধারণ সভায় তাদের হাতে থাকা ইসলামী ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে আইডিবির হাতে। তার মধ্যে ২ দশমিক ১ শতাংশ রেখে বাকিটা তারা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আইডিবির প্রতিনিধি হিসেবে থাকা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আরিফ সুলেমান সাংবাদিকদের জানান।
ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংকের ৩১৮টি শাখা রয়েছে বাংলাদেশে। ইসলামিক ব্যাংকিং পরিচালানাকারী এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধনের পরিমান দুই হাজার কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের পরিমাণ ৫৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার আছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। বাকি ২২ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান সে সময় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। সে সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন হয়।
এরপর গত ১১ মে আহসানুল আলমের একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাসে চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্য হয়।
আহসানুল আলমের অভিযোগ, ব্যাংকটিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রভাবমুক্ত করতে’ নতুন নেতৃত্ব বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলেও সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি ।
ফেইসবুক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংকে জামায়াত সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য আরাস্তু খান বলে আসছেন, ইসলামী ব্যাংক ফের স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে যে অভিযোগ আহসানুল আলম করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। তাকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন।