অকাল বন্যায় হাওরে ব্যাপক ফসলহানির প্রেক্ষাপটে রোজার আগে চালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের চিন্তা করছে সরকার।
Published : 04 May 2017, 05:33 PM
উদ্বৃত্ত মজুদ থাকার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও বাজারে কারসাজি এড়াতে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার খাদ্য ভবনে চালকল মিল মালিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কোনো দেশেই নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো কিছুর উপর সাধারণত ট্যাক্স থাকে না, আমাদের এখানেও দীর্ঘদিন ছিল না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় চাল আমদানি করায় ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল।
“পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে আগের অবস্থায় এ ট্যাক্স উঠিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছি, তাদের বিবেচনায় আছে। মনে করছি, ট্যাক্সটা কমে গেলে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি হ্রাস পাবে।”
অকাল বন্যায় হাওরের ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে ফসলহানির পরিমাণ ২২ লাখ টন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছিলেন, বাংলাদেশে বার্ষিক প্রায় ৩ কোটি টন চালের চাহিদা মেটাতে সমস্যা হবে না।
তিনি বৃহস্পতিবারও বলেন, চালের মজুদে কোনো সমস্যা নেই, সাড়ে ৫ লাখ টন মজুদ আছে।
“বোরো ধান প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। প্রতিবছর কিছু না কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়, এবার একটু বেশি হয়েছে। হাওর অঞ্চলের সমস্যায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না।”
চালের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে চাইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন কামরুল।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজারে চালের দামের তারতম্য হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
চালের বাজার নজরদারি দুর্বলতা রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “বাণিজ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে দেখছে।”
চালকল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, “কোনো মিলারদের কাছে স্টক নেই, মিল থেকে রিটেইলার পর্যন্ত গিয়ে ৪/৫ টাকা বেশি হয়। এখন যদি কেউ মজুদ করে থাকে, তা অসাধু ব্যবসায়ী করতে পারে।”
চালের আমদানিতে শুল্ক আরোপের দাবি মিল মালিকদের ছিল।
লায়েক আলী বলেন, “আগে আমরা বলেছিলাম চাল আমদানিতে ট্যাক্স ধার্য করার জন্য, আজ জনসাধারণের স্বার্থে মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে যদি সে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে আমদানি করে এনে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।”
শুল্ক আরোপের আগে ১৫ লাখ টন ধান ভারত থেকে আসতো জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এ চাল আসাতে আমাদের কৃষকরা মার খাচ্ছিল বলে ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল।
“এবার দেখছি কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে, বাজারটাকে অস্থির করে সঙ্কট তৈরি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।”
বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার হলেও তা সাময়িক সময়ের জন্য হবে বলে জানান মন্ত্রী।
বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী কামরুল বলেন, “এক কোটি ৯১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল, হাওর ও অন্যান্য অঞ্চলে দুর্যোগে ১৫ লাখ ধান নষ্ট হতে পারে, এখনও আমরা কমপক্ষে এক কোটি ৮০ লাখ চাল সংগ্রহ করতে পারব।”