মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ক্রয়মূল্যের উপর নির্ভর করে না: অ্যামটব

মোবাইল ইন্টারনেটের দাম নিয়ে অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলছে, গ্রাহক পর্যায়ে ডেটা প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণে ইন্টারনেট ব্যান্ডইউডথ কেনার খরচের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2017, 03:49 PM
Updated : 28 April 2017, 03:54 PM

তারা বলছে, এক্ষেত্রে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন ও তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া ১০০ টাকা ইন্টারনেট ব্যবহারে ২১ দশমিক ৭৫ টাকা সরাসরি চলে যায় ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জ হিসেবে। 

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ইন্টারনেটের ক্রয় মূল্য ২৬ পয়সা, গড় বিক্রয় মূল্য ২১৭ টাকা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে তা নিয়ে ফেইসবুকে জোর আলোচনা শুরু হয়। মোবাইল অপারেটররা অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন বলে সমালোচনা করেন অনেকে।

এই প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেটের মূল্য বিভ্রান্তি দূর করতে পাইকারি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে অপারেটদের পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

বুধবার মোবাইল অপারেটরগুলোর কর্তব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে এই নিদের্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ২০০৯ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডইউডথের মূল্য ‍২৭ হাজার টাকা থাকলেও বর্তমান সরকার সেটা কমিয়ে ৬২৫ টাকা করেছে।

এ অনুসারে এখন ভোক্তা পর্যায়ে কেন রিফ্লেকশন হচ্ছে না সে প্রশ্ন করেছেন বলে জানান তিনি।

শুক্রবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)।

তারা বলেছে, মোবাইল অপারেটররা ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরদের কাছ থেকে গতির পরিমাণে ব্যান্ডইউডথ কেনেন।

“গতির সাথে ডেটার ভলিউমের সম্পর্কের অবতারণা অবান্তর।”

ইন্টারনেটের মূল খরচ নেটওয়ার্কের সঙ্গে নির্ভর দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ইন্টারনেট সেবা দিতে নেটওয়ার্ক লাইসেন্স অধিগ্রহণ ফি, তরঙ্গ চার্জ, নেটওয়ার্ক স্থাপনে ব্যয়, নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা ব্যয়, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, চ্যানেল কমিশন ও প্রণোদনা ব্যয় ইত্যাদি রয়েছে।”

২০০৯ সালের তুলনায় এখন ইন্টারনেটের দাম কমার বিষয়টি তুলে ধরে অ্যামটব জানায়, থ্রিজি সেবা চালুর আগে এক এমপিবিএস গতির এক  জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার টাকা, বর্তমানে এটি ২০০ টাকায় নেমে এসেছে।

“২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ইন্টারনেটের মূল্য প্রতি মেগাবাইট ডেটা খরচ ৯৩ শতাংশ কমেছে। তখনকার প্রতি মেগাবাইট ইন্টারনেট মূল্য ৩ টাকা ৮৯ পয়সা, এখন কমে মাত্র ২৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।”

এই সময়ে তরঙ্গ, লাইসেন্স ও নেটওয়ার্কে অপারেটরদের বিশাল বিনিয়োগ করতে হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মোবাইল অপারেটররা এই পর্য‌ন্ত এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, কিন্তু লভ্যাংশ ৩ শতাংশের কম।”

ইন্টারনেটের দামের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বলেও এতে জানানো হয়।

সরকার ইন্টারনেট সেবাকে করের আওতামুক্ত করলে এর দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে বলে অ্যামটবের ভাষ্য।

টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির হিসাবে গত ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছয় কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে ছয় কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।