ইন্টারনেট মূল্য বিষয়ে গ্রাহককে ব্যাখ্যা দেবে অপারেটররা

ইন্টারনেটের মূল্য বিভ্রান্তি দূর করতে পাইকারি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে অপারেটদের ব্যাখ্যা দিতে বলেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2017, 11:59 AM
Updated : 26 April 2017, 01:28 PM

ইন্টারনেট ব্যান্ডউডথের পাইকারি দামের চেয়ে অপারেটরা ভোক্তা পর্যায়ে অনেকগুণ বেশি নিয়ে গ্রাহকের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অভিযোগ আসছে।

এর প্রেক্ষাপটে বুধবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আমন্ত্রণে অপারেটরদের সঙ্গে ইন্টারনেটের মূল্য পুর্ননির্ধারণ সংক্রান্ত সভা থেকে অপারেটরগুলোকে গ্রাহকদের কাছে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

ইন্টারনেটের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ হচ্ছে বা দামের বিষয়ে কোনো ফাঁকি রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রকৃত তথ্য অপারেটরদেরকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহকদের জানাতে বলা হয়।

সভা শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, “অপারেটরদের ডাকা হয়েছিল; বিভিন্ন পত্রিকায় ও ফেইসবুকে দেখছি একটি মূল্য ধরা হচ্ছে, এত বেশি মূল্য কেন ভোক্তা পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে।

“মূল্য নির্ধারণে কোনো ফাঁকি রয়েছে কিনা, বিষয়টি জানতে আগামী দুইদিনের মধ্যে অপারেটরদের এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।”

২০০৯ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডইউডথের মূল্য ‍২৭ হাজার টাকা থাকলেও বর্তমান সরকার সেটা কমিয়ে ৬২৫ টাকা করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রশ্ন করেছি, এখন ভোক্তা পর্যায়ে এ অনুসারে কেন রিফ্লেকশন হচ্ছে না।”

গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের অতিরিক্ত মূল্যের অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন হয়েছে।

সভায় এসব অভিযোগের সত্যাসত্য বিষয়ে অপারেটরগুলোর কাছে জানতে চাওয়ার কথা জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, “এই যে সংবাদটি যাচ্ছে, তার প্রতিটি জিনিস তাদের (অপারেটর) আমাদেরকে বোঝাতে হবে যে সঠিক কিনা। সঠিক না হলে, কোন কোন জায়গায় সঠিক নয় এবং করণীয় কী আছে।

“তাদের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, যে প্রচারণাটি চলছে এর মধ্যে অনেকগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য আছে; যেমন হোলসেল এবং রিটেইলের মধ্যে কনফিউজড করা হয়েছে। স্পিড ও ভলিউমের মধ্যে কনফিউজড করা হয়েছে।”

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম (ফাইল ছবি)

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এমএনওদের (মোবাইল অপারেটর) বক্তব্য, দুটো কনফিউজ করার ফলে অঙ্কে যে হিসাব দেখানো আছে সেখানে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, যেটা তথ্যভিত্তিক নয়, এর মাঝে ভ্যাট, ট্যাক্স, প্রডাকশন খরচ, মেইনট্যান্যান্স খরচ আছে। এই সমস্ত কারণে উৎপাদন খরচ এবং এন্ড ইউজারলেবেলে যে খরচের তারতম্য হিসেবে আনা হয়নি।”

অপারেটররা বলছে, বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকরা বিভিন্ন মেয়াদ ও পরিমাণে ইন্টারনেট নিয়ে থাকেন, আর এই দামের সাথে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জ গ্রাহকের পকেট থেকে যাচ্ছে।

তারানা হালিম বলেন, “তারপরও আমরা বলেছি, মাঝে কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি আছে কিনা, এটা দেখতে হবে। অপারেটরদের দুদিনের মধ্যে প্রত্যেকটি পয়েন্টের ক্লারিফিকেশন দিতে হবে।

“আমি তাদেরকে (অপারেটর) বলেছি, শুক্রবারে প্রতিটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদেরকে জানাতে হবে সংবাদটি কী, মানুষের ধারণাটা কী এবং তাদের বক্তব্য কী। এটা মানুষের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা। কারণ গ্রাহককে দিয়েই অপারেটররা ব্যবসা করছে। কাজেই তাদেরকে জানাতে হবে প্রত্যেকটি পত্রিকায় নিজের খরচে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যে, প্রকৃত তথ্যটি এটি। তাদের ব্যাখ্যা আমার কাছে দিলে হবে না, মানুষের কাছে দিতে হবে।”

ইন্টারনেটের দাম কমাতে চেষ্টা চলছে

ইন্টারনেটের মূল্য নিয়ে এই বিভ্রান্তি নিরসনের পাশাপাশি মূল্য কিছুটা হলেও কমানো যায় কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য পৃথিবীর তৃতীয় সর্বনিম্ন জানিয়ে তারপরও ট্যাক্স-ভ্যাট কমিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

তারানা বলেন, “ট্যাক্স, ভ্যাটে কিছু করার আছে কিনা- সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। অথবা কিছুটা যদি রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল, কস্ট শেয়ারিং মডেলে যদি কস্ট কমানো যায়- সেই বিষয়গুলো এসক্সপ্লোর করে আমি বলেছি, দুইদিনের মধ্যে এমএনওরা একটা প্রস্তাব দেবেন।

“আমরা এখন তৃতীয় সর্বনিম্ন, আমরা সর্বনিম্ন যদি হতে পারি, সেটাই বা কম কিসের। কাজেই সেই মানসিকতা নিয়ে আমরা দেখতে চাই কতদূর করতে পারি।”

সব পক্ষের মতামত নিয়ে আগামী ছয় মাসের দাম কমানোর যায় কিনা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারার আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

“আমি আশা করছি ছয় মাসের মধ্যে এমএনওরা কী বলছেন, আইআইজিরা কী বলছেন, এনটিটিএনরা কী বলছেন, বিটিআরসির মন্তব্য- সবগুলোকে কম্পাইল করে ছয় মাসের মধ্যে একটা কনক্লুশনে আসতে পারব যে কিছু করা যাচ্ছে কিনা।”

সভায় ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও মোবাইল অপারেটররাসহ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারি শেষ নাগাদ বিটিআরসির হিসেবে বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছয় কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে ছয় কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।