তিনি বলেছেন, মোবাইল ফোনে এ ধরনের ‘ওভার দ্য টপ’ অ্যাপ ব্যবহার করে ভয়েস কলের সুবিধা নিয়ে আগামী দুই এক মাসের মধ্যে একটি সিদ্ধান্তে আসতে চায় বিটিআরসি।
শুক্রবার বিটিআরসি কার্যালয়ে ‘অবৈধ ভিওআইপি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে’ এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি প্রধান আন্তর্জাতিক কল রেট বৃদ্ধির পর বৈধ কলের পরিমাণ কমে আসার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট বাড়ানোর আগে বৈধ পথে গড়ে দিনে ১২ কোটি মিনিট ইনকামিং কল দেশে আসত। ২০১৫ সালের আগস্টে কল টার্মিনেশন রেট দেড় সেন্ট থেকে বাড়িয়ে দুই সেন্ট করার পর এখন তা দৈনিক গড়ে সাত কোটি মিনিটে নেমে এসেছে।
তবে কল কমার জন্য দাম বাড়ানোকেই মূল কারণ বলে মনে করছে না বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলছেন, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কাইপ, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো ভিওআইপি অ্যাপের মাধ্যমে ভয়েস কলের সুবিধাও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বৈধ ভয়েস কলের ওপর।
“এটি একটি বিরাট সমস্যা আমাদের সামনে। শুধু যে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে তা নয়, অনেক কল ওটিটি... যেমন ভাইবার, ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হচ্ছে। তবে এর পরিমাণ আমরা এখন বলতে পারছি না।”
এ বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “এ ব্যাপারে কোনো নীতিমালা এখনও প্রণয়ন করা হয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ উদাহরণ নেওয়ার চেষ্টা করছি। কোনো কোনো দেশে এসব অবৈধ ঘোষণা করেছে, অনেকে দেশ বলেছে শুধুমাত্র ডেটা সরবরাহ করা যাবে, ভয়েস নয়।
“এ ব্যাপারে আমরা সবেমাত্র চিন্তা শুরু করেছি। আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”
২০১৪ সালে যেখানে বিশ্বে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২০০ কোটির মত, চলতি বছর শেষে তা ৩৯০ কোটি ছড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানি এরিকসন।
ভিওআইপি ও ওটিটির কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে কোনো তথ্য বিটিআরসি দেয়নি। তবে এই পরিমাণ প্রতিদিন দুই কোটি টাকার কম নয় বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
ক্ষতি যে কেবল সরকারের হচ্ছে তা নয়, মোবাইল অপারেটর ও আইআইজি অপারেটরগুলোও কল কমে যাওয়ায় লাভের ভাগ হারাচ্ছে। ভয়েসের সঙ্গে ডেটা ব্যবসায় গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বজুড়েই এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে মোবাইল অপারেটরগুলো।
অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশের (অ্যামটব)
সাধারণ সম্পাদক টি আই এম নুরুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওটিটি বিষয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে বর্তমানে কোনো নীতিমালা নেই। এ ধরনের নীতিমালা করতে হলে অপারেটরদের সাথে আলোচনা করেই তা করা উচিত, যাতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা যায়।”
দেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ‘নিরাপত্তার কারণ’ দেখিয়ে গত বছর জানুয়ারিতে সরকার ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটস অ্যাপসহ কয়েকটি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ও ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করেছিল। তবে কয়েকদিন পর সেগুলো খুলে দেওয়া হয়।
অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে সরকারের উদ্যোগে ঘাটতি থাকার অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি সম্পূর্ণ বন্ধ করা যাবে না, কিছু না কিছু থাকবেই। তবে আগের থেকে অনেক কমিয়েছি, আরও কমে যাবে।”
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খান, কমিশনার ও মহাপরিচালকরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।