দাবি আদায়ে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটকে ‘হঠকারিতা’ আখ্যায়িত করে সেজন্য দায়ীদের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়েছে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
Published : 30 Sep 2016, 11:44 PM
পাঁচদিনের ধর্মঘটে রপ্তানি খাতের ক্ষতি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ অবস্থান জানাতে শুক্রবার হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্ষতিপূরণের এ দাবি জানানো হয়।
এতে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ৮০ ভাগ অংশের ব্যবহারকারী হচ্ছে পোশাক রপ্তানিকারকরা। অথচ তাদেরকে না জানিয়ে ধর্মঘটের মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহন শ্রমিক ও বন্দর শ্রমিকরা।
ধর্মঘটের কারণে পোশাকের অর্ডার বাতিল, শিপমেন্ট বাতিল এমনকি বায়ারদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।
সিদ্দিকুর বলেন, “পাঁচদিনের ধর্মঘটে আটকা পড়া অনেক রপ্তানিপণ্য এখন বিমানে পাঠাতে হবে, ডিসকাউন্ট দেওয়া লাগতে পারে, আবার বিলম্বের জন্য অর্ডার/শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যেতে পারে। ব্যবসায়ীদের এসব ক্ষতির জন্য যারা দায়ী বলে বিবেচিত হবে তাদেরকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
এই পাঁচদিনে বাণিজ্য মন্ত্রী, নৌ মন্ত্রণালয়ের মচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কোনো ফল হয় নি অভিযোগ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
“আন্দোলনকারী ও সরকার দুইপক্ষকে অনুরোধ করে কোনো ফল পাইনি। ৩৩ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এমন দুরবস্থা দেখি নাই। এই প্রথম আমি অনুভব করলাম প্রধানমন্ত্রী দেশে নাই।”
সমস্যার সমাধানে মন্ত্রীদের দ্বারস্ত হয়ে ব্যর্থ ব্যবসায়ী নেতা সিদ্দিকুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এইভাবে দেশ চলতে দেওয়া যায় না। দেশে একটা সরকার আছে, আইন কানুন আছে। যা করা দরকার দেশি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী করতে হবে। কোনো হটকারিতা চলবে না।”
ধর্মঘটের ক্ষয়ক্ষতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বলে জানানো হলেও এতে ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক পরিমাণ প্রকাশ করা হয় নি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “কনটেইনার ভাড়া, বন্দর ভাড়া ও জাহাজ ভাড়া বাবদ মালিকরা জরিমানা দিয়েছে। বায়ারদের আস্থা নষ্ট হয়েছে, অনেক অর্ডার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তবে এখনও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো শিপমেন্ট বাতিলের অভিযোগ আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিদিন গড়ে যে ৭৬ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়ে থাকে সেটা বন্ধ ছিল। কয়েক দিনপর ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।”
চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করা প্রাইম মুভার-ট্রেইলার মালিক-শ্রমিকরা নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ওজন বহনে জরিমানার নিয়ম বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত সোমবার থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার পর শুক্রবার তা স্থগিত করে ।
ধর্মঘটের পাঁচদিনে বন্দরে কন্টেনার জট সৃষ্টি হয়েছিল।
বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাঁছদিনের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ২৭ হাজার ৯১৭ টিউস কন্টেইনারসহ মোট ৪০ হাজার ২৫০ টিউস কন্টেইনার আটকা আছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টিউস কন্টেইনারে আছে পোশাক কারখানা সংশ্লিষ্ট আমদানি পণ্য। বন্দরের মোট ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিউস।