বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির জন্য এ খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের আরও উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
Published : 30 Jan 2016, 07:32 PM
আগামী পাঁচ বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতে করণীয় নিয়ে শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে এ পরামর্শ দেন তিনি।
গত অর্থবছর তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতির তাগাদা দিয়ে বলেছেন, অন্যত্থায় আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিতে চাইবে না। নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় তারা এটা করবে।
সম্প্রতি একজন বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশে এসে একটি পোশাক কারখানায় শিশুদের কাজ করতে দেখে তা নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন বলে জানান বার্নিকাট।
পোশাক ব্যবসায়ীদের প্রতি পরিস্থিতির উত্তরণের তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, “এসব বিষয়ের পরিবর্তন না করলে অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিতে চাইবে না। কারণ এটি তাদের ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার জন্যও কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও অগ্রগতি দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার আগে বাংলাদেশকে শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন বার্নিকাট।
বাংলাদেশে কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছিল।
এরপরে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ১৬টি শর্ত দেওয়া হয়, যার মধ্যে কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার ছিল অন্যতম।
এসব শর্তের প্রায় সবগুলোই বাংলাদেশ পূরণ করেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তবে শর্তগুলোর বিভিন্ন দিক দিন দিন অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য।
এই লক্ষ্য পূরণে উত্পাদন বাড়াতে কী পরিমাণ গ্যাস, তেল ও দক্ষ জনশক্তি দরকার সে বিষয়ে সরকারকে অবহিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
“তাহলে সরকার সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”
বাংলাদেশে বিনিয়োগে ভাটার জন্য জ্বালানি ও জমির সংকটের কথা বলেছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
“গ্যাস সংকটের কারণে বড় উদ্যোক্তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে না। এর সঙ্গে রয়েছে কারখানার জন্য জমির সংকট। তাই সরকারকে জ্বালানি ও জমির সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।”
বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শরিফ আস সাবের।
সভায় অন্যদের মধ্যে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডোনসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।