নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগই (এমএনপি) কলড্রপসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এর বিদায়ী চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস।
Published : 21 Oct 2015, 05:56 PM
এমএনপি চালু হলে গ্রাহকরা সহজেই অপারেটর বদলের সুযোগ পাবে এবং এতে অপারেটরাও বাধ্য হয়ে সেবা উন্নত করবে বলে মনে করেন তিনি।
গত তিন বছর ধরে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সুনীল কান্তি বোস। তার উত্তরসূরী হিসেবে আসছেন প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী শাহজাহান ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সেখানে শাহ মাহমুদ নামে পরিচিত।
বিগত সময়ে কলড্রপসহ অন্যান্য সেবায় তেমন উন্নতি না হলেও এ বিষয়ে সুনীল কান্তি সাংবাদিকদের বলেন, “সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হয়েছে। অপারেটরদের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছিল। তবে এ সমস্যা ১০০% সমাধান হয়ে যাবে তা সঠিক নয়।”
বুধবার বিটিআরসি কার্যালয়ে শেষ কার্যদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বলছিলেন বিদায়ী চেয়ারম্যান।
বিটিআরসি এর দায়িত্ব নেওয়ার আগে সুনীল কান্তি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন চার বছর।
বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, “আগামীতে এমএনপি সেবা চালু হলে গ্রাহকদের অপশন তৈরি হবে, যে অপারেটর ভাল সেবা দিতে পারবে না তাদের গ্রাহরা অন্য অপারেটরে চলে যাবে। গ্রাহক ধরে রাখতেই অপারেটরা তাদের সেবা উন্নত করবে।”
আগামী বছরের শুরুতে দেশে এমএনপি চালুর ঘোষণা ইতোমধ্যে এসেছে।
গত তিন বছরে সফলতা বা ব্যর্থতা বিষয়ে সুনীল কান্তি বোস বলেন, “যা করতে পারিনি তাই ব্যর্থতা।”
তার সময়ে বাজার যাচাই না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রচুর লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও মতবিনিময় সভায় উঠে আসে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, লাইসেন্স নিলেও কয়েকটি আইআইজি প্রতিষ্ঠান এখনও অপারেশন শুরু করতে পারেনি।”
দায়িত্ব নেওয়ার পর আইআইজি, আইসিএক্স, আইআইজি এবং প্রায় এক হাজার ভিএসপি লাইসেন্স ইস্যু করেন সুনীল।
আইওএফ গঠনের বিষয়টি এখনও বহুল আলোচিত হয়ে আসছে মন্তব্য করে বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, “বিষয়টি এখনও স্থায়ী নয়। সরকারকেই এর সমাধান করতে হবে, সমাধানের উপায় আছে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অপারেটরদের পক্ষে উপদেষ্টা থাকা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, রেগুলেটর যেন আরও ক্ষমতা নিয়ে কাজ করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”
সম্প্রতি মোবাইল অপারেটর রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশে ছয়টি অপারেটর টিকে থাকার মত অবস্থায় নেই বলেও মন্তব্য করেন বিদায়ী চেয়ারম্যান।
সুনীল কান্তি বলেন, “দেশে একটি অপারেটর ভাল লাভ করছে, দুয়েকটি সামান্য লাভে আছে, বাকিগুলোর অবস্থা ভাল নয়- দে হ্যাভ টু ডাই অর জয়েন টু আদার।”
আগামী দিনগুলোতে টেলিযোগাযোগ সেক্টরে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনবল তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ইন্টারনেট নিরাপত্তায় সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা গঠনের প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে সুনীল কান্তি বলেন, প্রশিক্ষিত, দক্ষ একদল লোক এ খাতে নিয়োগ করতে হবে।
আগামী ২০১৬ সালে অপারেটরদের চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল সেবা দিতে তরঙ্গ দেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “৭০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, টেকনোলজি নিউট্রালিটি বা প্রযুক্তি নিরেপেক্ষতা পেলে অপারেটদের কাছে যে তরঙ্গ রয়েছে তার মাধ্যেমেও ফোরজি সেবা সম্ভব হবে বলে মনে করি।”
টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে করকাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান সুনীল কান্তি বোস।
সুনীল কান্তি টেলিযোগযোগ সচিব থাকাকালীন বিটিআরসি এর ক্ষমতা খর্ব করে মন্ত্রণালয়ের হাতে নেওয়া হয়। এখন টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর (ডট) নামে একটি নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে , যার কাছে রেগুলেশনের ক্ষমতাও থাকবে বলে কথা উঠেছে।
সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে বিটিআরসি এর ভূমিকা কী হবে- এ বিষয়ে বিদায়ী চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা ৷
জবাবে তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল বিটিআরসি থেকে অনেক বিষয় সরকারকে জানানো হত না ৷ এখন সে পরিস্থিতি নেই।”
টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর সরকারকে পরামর্শ দেবে উল্লেখ করে সুনীল বলেন, “সরকারকেও বুঝতে হবে রেগুলেশনের কাজটি বিটিআরসি এর হাতেই থাকা উচিত ৷ বিটিআরসি না হলে টেলিযোগাযোগ খাতের এত বিকাশ হত না৷
এ সময় বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীবখানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।