হাজারের বান্ডিলে একশ টাকার নোট: সোনালী ব্যাংকে কারসাজির সন্দেহ

বাগেরহাটে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে সরবরাহ করা এক হাজার টাকার বান্ডিলে একশ টাকার নোট পাওয়ার ঘটনায় সোনালী ব্যাংকে কারসাজি করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা।

অলিপ ঘটকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2015, 00:25 AM
Updated : 14 July 2015, 05:43 AM

ঘটনা খতিয়ে দেখতে সোমবার সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক শাখা ও রূপালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখা ঘুরে এ সন্দেহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা অফিসের যুগ্ম ব্যবস্থাপক (ক্যাশ) তুলসী দাস রায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর মনে হচ্ছে, গরমিলের কারসাজি সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে করা হয়ে থাকতে পারে।”

রোববার শহরের রেলরোডের সোনালী ব্যাংকের ওই আঞ্চলিক শাখা থেকে ৫০ লাখ টাকা নেওয়া হয় রাহাতের মোড়ের রূপালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায়। পাঁচটি প্যাকেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলযুক্ত ট্যাগ লাগানো এক হাজার টাকার নোটের ৫০টি বান্ডিলে (প্রতি বান্ডিলে ১০০টি নোট) ওই টাকা আনা হয়।

পরে রূপালী ব্যাংকের ক্যাশে ওই টাকা বের করে গোনার সময় হাজার টাকার নোটের ১০টি বান্ডিলে একশত টাকার মোট ১১৮টি নোট পাওয়া যায়। এর ফলে এক লাখ ছয় হাজার ২০০ টাকা ঘাটতি পড়ে।

এই ঘটনার পর রূপালী ব্যাংকের ওই শাখার কর্মকর্তারা দ্রুত টাকার প্যাকেটসহ সোনালী ব্যাংকে ফিরে যান এবং বিষয়টি নজরে এন অভিযোগ করেন।

এরপর সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা অফিসের যুগ্ম ব্যবস্থাপক (ক্যাশ) তুলসী রায় ও উপ-ব্যবস্থাপক শাহরিয়ারের সমন্বয়ে একটি অডিট দল সরেজমিনে ব্যাংক দুটিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা ওই বান্ডিলগুলো বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বেশকিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণে, গরমিল থাকা ওইসব বান্ডিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পিন (ফাই পিন) খুলে তা পুনরায় লাগানো এবং কোনো তফসিলি ব্যাংক অন্য কোন ব্যাংক বা গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্যাগ ও লেভেল লাগানো টাকা দিতে পারবে না বলে বিধান থাকলেও তা লঙ্ঘন করার মতো ঘটনা বের হয়ে এসেছে।

এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট আঞ্চলিক শাখা ক্যাশ বিভাগের উচ্চ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্ত জড়িত বলে সন্দেহের কথা বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকসহ বাগেরহাটের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসখানেক আগে সোনালী ব্যাংকের চিতলমারী শাখায় টাকা সরবরাহের পর সেখানেও একই ভাবে এক হাজার ও পাঁচশত টাকার বান্ডিলে একশত টাকার কিছু নোট পাওয়া যায়, যাতে প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা ঘাটতি হয়েছিল।

পরে আঞ্চলিক কার্যালয়ের ক্যাশ বিভাগের সন্দেহভাজন কয়েকজন কর্মকর্তা ও চিতলমারী শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী যৌথভাবে নিজ পকেট থেকে ওই অর্থ ফেরত দেওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

হাজারের বান্ডিলে একশ টাকার নোট: সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ে বান্ডিলের কারসাজি খতিয়ে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৭ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ে সরবরাহ করা হয়, যার থেকে রোববার রূপালী ব্যাংকে ওই ৫০ লাখ টাকা সরবরাহ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরবরাহ বান্ডিলে কোনো গরমিল বা কারসাজি ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ব্যাংকের খুলনা অফিসের যুগ্ম ব্যবস্থাপক তুলসী রায় ।

“বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংকে পাঠানো বান্ডলগুলো সঠিক ছিল। ওই ২৫ কোটি টাকা যথাযথভাবে বুঝে পেয়ে সোনালী ব্যাংকের শাখার কর্মকর্তারা লিখিত দিয়েছেন।”

“কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০০৫ সালের একটি ঘোষণা অনুয়ায়ী কোন তফসিলি ব্যাংক অন্য কোন ব্যাংক বা গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্যাগ ও লেভেল লাগানো টাকা দিতে পারবে না। কিন্তু সোনালী ব্যাংক তা মানে নি, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।”

তুলসী রায় আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের হওয়ার আগে টাকার বান্ডিলের ওপর লাগানো কাগজ এবং বান্ডিলের প্রথম এবং শেষ টাকার গায়ে স্বাক্ষর থাকে। কিন্তু কয়েকটি বান্ডিলে তা নেই। এতে মনে হচ্ছে গরমিলের কারসাজি সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে করা হয়ে থাকতে পারে।”

এদিকে ঘটনা তদন্তে সোনালী বাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক কার্যালয় আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশুতোষ মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ব্যাংকের সিনিয়র এক্সকিউটিউভ অফিসার খান বাবুল রহমানের নেতৃত্বে ওই তদন্ত কমিটিকে মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে জানিয়ে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকতা তুলসী রায় মন্তব্য করেন।