স্থল ও আকাশপথ বন্ধ, তাই সাগরপথে মানবপাচার: পুলিশ

সরকারের পদক্ষেপ ও পুলিশের তৎপরতায় সড়ক ও আকাশপথে মানবপাচার বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেছুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 12:33 PM
Updated : 2 June 2015, 01:20 PM

আর এই কারণে এখন সাগরপথে মানবপাচার বেড়েছে বলে মঙ্গলবার ঢাকায় মানবপাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে আন্তঃদেশীয় পুলিশি সহযোগিতা জোরদার নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।

আন্দামান সাগরে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার মধ্যে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তার এই বক্তব্য এল। সাগরে ভাসমানদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর। 

মোখলেছুর বলেন, “আগে স্থলপথে, বিমানবন্দর দিয়ে মানবপাচার হত বেশি। স্থলপথে, বিমান বন্দর দিয়ে যখন মানবপাচার বন্ধ হয়ে গেছে, তখনই নদীপথে, সমুদ্রপথে পাচারের প্রবণতা বেড়েছে।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানবপাচার বন্ধে সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের তিনটি সেল কাজ করছে।

মানবপাচারে জড়িত সাড়ে তিন হাজারের বেশি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় এদের মধ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে বলে জানান মোখলেছুর।  

তিনি বলেন, তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অনেককে ধরা হয়েছে, অনেকে আবার বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

অপরাধীদের ছাড়া পাওয়ার পেছনে পুলিশের তদন্তে কোনো ঘাটতি আছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, “আমাদের কিছু ভুল থাকতে পারে, তবে আমাদের তদন্তেই কিন্তু আটজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।”

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, সরকার মানবপাচার রোধ করার বিষয়ে আন্তরিক এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপই তার প্রমাণ।

সিআইডিতে স্বতন্ত্র মানব পাচার ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বিভাগগুলোতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিভিন্ন জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন, উইমেন সাপোর্ট ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন স্থাপনের কথা তুলে ধরেন তিনি।

মানবপাচার প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান।

এই ধরনের ট্রলারে হয় সাগরপথে মানবপাচার

মানবপাচার মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতির চিত্র ও উইমেন সাপোর্ট ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন স্থাপনের চিত্র তুলে ধরেন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

ইউএনডিপির আবাসিক পরিচালক পলিন টিমেসিস মানবপাচারের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের সুরক্ষা ও সহায়তায় সংস্থাটির সহযোগিতা কার্যক্রম তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ পুলিশ, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ ও ইউএনডিপির পুলিশ রিফর্ম প্রোগ্রামের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ফিলিপিন্স ও মালয়েশিয়ার মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান সম্পর্কিত অপরাধ তদন্তে অভিজ্ঞ ৩৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর বলেন, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া পুলিশ যৌথভাবে শিশু পর্নোগ্রাফিতে জড়িত একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উডস আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে এ অঞ্চলের দেশগুলোর পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে এএফপি’র চলমান বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।

এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পুলিশ বাহিনীগুলোর মধ্যে কার্য‌কর সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।

পুলিশ রিফর্মস প্রোগ্রামের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মোখলেছুর এই আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।