মানবপাচার: নৌকায় করে সাগরে, এরপর ট্রলারে

মানবপাচারে কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার তিনটি এলাকাকেও রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 11:14 AM
Updated : 2 June 2015, 12:14 PM

এই তিনটি স্থান হল বাঁশখালী উপজেলার উপকূলবর্তী ইউনিয়ন ছনুয়া, শেখেরখিল ও খানখানাবাদ।

আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) নামে চিহ্নিত এক মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে জড়ো করে রাজ্জাক তার বাড়িতে রাখত এবং সেখান থেকে ছনুয়া ঘাট দিয়ে মাছ ধরার ছোট নৌকা করে পাচারের জন্য গভীর সাগরে নিয়ে বড় ট্রলারে তুলে দিত।”

বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি থেকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার রাজ্জাক ছনুয়া এলাকা দিয়ে মানবপাচারের নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে পুলিশের দাবি। একইভাবে শেখের খিল ও খানখানাবাদ দিয়েও মানবপাচার চলে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের শিবিরে মৃত্যু এবং অবৈধদের গ্রহণে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার অস্বীকৃতিতে আন্দামান সাগরে বহু মানুষ ট্রলারে ভাসতে থাকলে তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে।

ভাসমান এই মানুষদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য।  

এরপর মানবপাচারকারীদের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশেও অভিযান জোরদার হয়। এর ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার হন রাজ্জাক।

রাজ্জাককে নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হলেও তার সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বল দেওয়া হয়নি।

পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার বলেন, রাজ্জাক শীর্ষ মানবপাচারকারীদের অন্যতম। আগে ডাকাতিতে জড়িত থাকলেও বর্তমানে সে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত।

“রাজ্জাক বাঁশখালীর ছমি উদ্দিন ডাকাতের হাত ধরে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়লেও পরে আত্মীয় শফিউল আলম ও ইউনুছ মাঝির মাধ্যমে মানবপাচারের সঙ্গে জড়ায়।”

সাগরে নিয়ে এই ধরনের ট্রলারে তোলে মানবপাচারকারীরা

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ্জাক আড়াই থেকে তিনশ’ মানুষকে পাচারের কথা স্বীকার করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

রাজ্জাকের বিরুদ্ধে বাঁশখালী ও কক্সবাজারের পেকুয়া থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে চারটি এবং ডাকাতির অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।

মানবপাচার ঠেকাতে পুলিশের সফল না হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে হাফিজ আক্তার বলেন, “নগরী ও জেলায় ব্যাপক পরিমাণ লোকের আসা-যাওয়ার কারণে সবাইকে নজরে আনা পুলিশের পক্ষে সম্ভব হয় না।”

তবে পাচার রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে পাচারের আগে গত দুই বছরে চট্টগ্রাম জেলায় বেশ কয়েকজনকে উদ্ধারের কথা জানান তিনি।

এসব ঘটনায় সাতটি মামলায় ৬৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

মানবপাচার রোধে সবাইকে সচেতন করে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া যে বিদেশ যাওয়া যায় না, মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শহীদুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুল হাসানও ছিলেন।