মাগুরার এই উপনির্বাচনেও সেই উপনির্বাচনের ভুত

দুই দশক আগে যে জেলায় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি উঠেছিল, সেই একই এলাকায় ফের উপনির্বাচন নিয়ে ভাবনায় রয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2015, 04:47 PM
Updated : 25 May 2015, 04:47 PM

পূর্বসূরিদের বাজে অভিজ্ঞতার আলোকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ইসি কতটা সতর্ক, তা ফুটে উঠেছে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কথায়।

তিনি বলেন, “আগে সেখানে উপনির্বাচন নিয়ে অনেক কিছু ঘটেছে। তাই এবারের এ নির্বাচন নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ১৯৯৪ সালে মাগুরা-২ আসনে উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে যোগ করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি।

২১ বছরের ব্যবধানে ফের উপনির্বাচনের দেখা মিলেছে খুলনা বিভাগের জেলায়। তফসিল অনুযায়ী ৩০ মে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্পর্শকাতর’ তকমা পাওয়া মাগুরা-১ আসনের উপনির্বাচন।

মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জন ভোটারের জন্য কেন্দ্র ১৪০টি। ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মজিবুর রহমান থাকছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে।

ভোটকে সামনে রেখে ‘সতর্কতার’ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, আগের এক উপনির্বাচনের বিষয় মাথায় রেখেই এবারের ভোটের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে।

“কোনোভাবেই যাতে আইনের ব্যত্যয় না ঘটে ২১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।”

এই নির্বাচনে বিএনপি অনুপস্থিত থাকলেও শঙ্কা ছাড়ছে না নির্বাচন কমিশনকে। পুলিশের বিশেষ শাখা বলেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় কিছুটা উত্তেজনা রয়েছে। বাকিদের প্রচারণা দৃশ্যমান নয়।

এবার সরকারদলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আবদুল ওয়াহ্হাব। এছাড়া এনপিপির কাজী তৌহিদুল আলম আম প্রতীক নিয়ে, বিএনএফের কে এম মোতাসিম বিল্লাহ টেলিভিশন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তপন কুমার রায় সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনেও মাগুরার দুটি আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন একজন অবরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। তিনি হলেন প্রয়াত মজিদ-উল হক। তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। 

বিষয়টি তুলে ধরে ২১ মের সভায় নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, “সে নির্বাচনে (পঞ্চম সংসদ) তৎকালীন শাসক দলের (বিএনপি) প্রার্থী ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। কাকতালীয়ভাবে বর্তমান নির্বাচনে শাসক দলের (আওয়ামী লীগ) প্রার্থীও একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল।”

ওই নির্বাচনে একটি আসনে বিজয়ী হলেও মাগুরা-২ এ মজিদ-উল হক হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আসাদুজ্জামানের কাছে।

আসাদুজ্জামান মারা গেলে ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আসাদুজ্জামানের ছেলে শফিকুজ্জামান বাচ্চুর বিপক্ষে বিএনপি প্রার্থী করেছিল কাজী সলিমুল হক কামালকে, যিনি ইকোনো বল পেন কোম্পানির মালিক।

“মাগুরা নির্বাচন নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়েছিল,” বলেন আবদুল মোবারকও।

তবে মাগুরা উপনির্বাচনে ইতিহাসের ‍পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মনে করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার।

মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি মাগুরা-১ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিষয়টি দেখভাল করছেন।

মাগুরা ভীতির কোনো কারণ নেই দাবি করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৯৪ সালের মতো এবার কোনো মতেই হতে দেব না। দলীয় নেতারা কে কী করছেন, তা আমরা অবজার্ভ করছি।”

কারচুপি রোধে নতুন পদ্ধতি

সম্প্রতি তিন সিটি নির্বাচনের ১৩টি কেন্দ্রে ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ ভোট পড়াকে অস্বাভাবিক বলে মত দিয়েছেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার। ভোটের ফল গেজেটে প্রকাশ হওয়ায় তা আর তদন্ত করাও হয়নি।

এ ধরনের অস্বাভাবিকতা থাকলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে কারচুপির আঁচ করাই স্বাভাবিক বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মাগুরা উপনির্বাচনে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি দুই ঘণ্টায় উপ নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ করতে প্রস্তাব ইসি সচিবালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। এ লক্ষ্যে স্বাভাবিক ভোট পড়ার হার জানতে একটা মহড়াও করা হবে।”

আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের সভায় এ ধরনের মহড়ার উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেন এ নির্বাচন কমিশনার।

সিইসির কাছে এ সংক্রান্ত একটি ‘আনঅফিশিয়াল নোট’ দেন এক নির্বাচন কমিশনার।

এতে তিনি লেখেন, কারচুপি রোধে অন্যতম উপায় হচ্ছে ঘণ্টাওয়ারি প্রতিটি বুথে কত ভোট পড়েছে তা নির্ধারণ করা। ভোটের দিনের বাস্তবচিত্র পেতে কমিশন সচিবালয়ে একটি সেল করতে হবে। এ সেলের অন্তত পাঁচ কর্মকর্তা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীর পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ভোটের হার জেনে তা ইসিকে অবহিত করবেন।