ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভে লাঠিপেটা: এক পুলিশ বরখাস্ত

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়কদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভে লাঠিপেটার ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2015, 12:30 PM
Updated : 11 May 2015, 06:27 PM

রোববারের পুরো ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তাদের সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপির উপকমিশনার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

এদিকে হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দেওয়ার দাবিতে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবিরোধী ছাত্র ঐক্য।

ওই হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ধর্মঘট পালনের আহ্বানও জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানিতে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে রোববার ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ঘেরাওয়ে গেলে তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে পুলিশ।

ওই সময় তোলা বিভিন্ন ছবি এবং ধারণ করা ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের বুট দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়। সেই সঙ্গে নারীকর্মীদের ওপরও চড়াও হতে দেখা যায় পুলিশকে।

‘ডিএমপি’ কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে ছাত্র ইউনিয়নের ইসমতকে প্রহারের এক পর্যা য়ে চুল ধরে টানতে দেখা যায় পুলিশকে।

উপকমিশনার জাহাঙ্গীর সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের নায়েক মো. আনিসকে বরখাস্ত করা হয়েছে।”

মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বেলালুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানান তিনি।

তবে ডিএমপি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বিরূপ’ গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের প্রেক্ষাপটও যাচাই করবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিলকারীরা কিভাবে এতগুলো ব্যারিকেড পার হয়ে মিন্টো রোডে স্পর্শকাতর মন্ত্রিপাড়ায় এল, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

পুলিশের উপর ‘হামলার’ কারণে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গৃহীত আইনানুগ ব্যবস্থাও পর্যালোচনা করবে এই কমিটি।

তবে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের হামলার বিষয়ে কিছু বলা নেই ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরেকটি কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজিকে (অপারেশন) আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (সদর দপ্তর) ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ক্রাইম-মেট্রো)।

দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রগতিশীল জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়েনের সভাপতি হাসান তারেক বলেন, “পহেলা বৈশাখে নারী লাঞ্ছনার বিচার করতে পারেনি যে পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের হাতেই লাঞ্ছিত হয়েছে আমাদের বোনেরা। এ ঘটনা প্রমাণ করেছে পুলিশ হল নারী লাঞ্ছনাকারীদের মদদদাতা।”

যৌন নিপীড়নকারীদের রক্ষায় প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এই ছাত্রনেতা।

“রোরবার ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের নৃশংস হামলা বর্বরতার সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে।”

সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পারভেজ লেনিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক ফয়সাল ফারুক অভীক সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।

বিকালে ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ থেকেও জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।  

ওই সমাবেশে বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, “আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশের আচরণ দেখে মনে হয়, তাদের আচরণ পাকিস্তানের পুলিশদের আচরণকেও হার মানায়।

“অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই আজ অপরাধে পরিণত হয়েছে। কী রকম রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করলে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়?”

সমাবেশে ছাত্রনেতারা পুলিশি হামলার বিচার, বর্ষবরণে নিপীড়কদের গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবি জানান।

ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার, সহ-সভাপতি আবু তারেক সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী, ছাত্রমৈত্রী নেতা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

সন্ধ্যার পর প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবিরোধী ছাত্র ঐক্য ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করে।