ভোলা নদীতে নিমজ্জিত কার্গো উদ্ধার শুরু হয়নি

সুন্দরবনের মরা ভোলা নদীতে নিমজ্জিত সার বোঝাই কার্গো এমভি জাভালে নূর উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবাগেরহাট প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 12:22 PM
Updated : 6 May 2015, 02:12 PM

ঘটনাটি তদন্ত ও ক্ষতি নিরূপণের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসন একটি এবং বন মন্ত্রণালয় ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ দুটি কমিটি গঠন করেছে।

এছাড়া এই ঘটনায় পরিবেশগত ক্ষতির আশংকায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ শরণখোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।

এদিকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনায় ওই এলাকায় দূষণের আশংকার কথা বললেও কৃষি বিভাগ তা নাকচ করে দিয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মঙ্গলবার বিকালে ডুবোচরে আটকে পড়া কার্গোটির মালিকপক্ষ উদ্ধারের চেষ্টা করলে কার্গোটির তলা ফেটে গিয়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়।

প্রায় পাঁচশ টন এমওপি সার বোঝাই কার্গোটি গত রোববার (৩ মে) মংলা থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি যাচ্ছিল।

কার্গোটি নিমজ্জিত হওয়ার পর মালিকপক্ষের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহা. জাহাংগীর আলম, সুন্দরবন বিভাগের বন সংরক্ষক সুনীল কুমার কুন্ডু, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হুসাঈন চৌধুরী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জয়নূল আবেদীন বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মুহা. জাহাংগীর আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে বুধবার তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কারিগরি সরঞ্জাম না থাকায় তারা উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহায়তা চাইবেন বলে জানান তিনি। 

বন সংরক্ষক সুনীল কুমার কুন্ডু সাংবাদিকদের জানান, শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক কামাল উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার শরণখোলা থানায় কার্গোডুবির ঘটনায় বনের পরিবেশের ক্ষতির আশংকায় একটি জিডি করেছেন।

এছাড়া সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হুসাঈন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, বনবিভাগ নিমজ্জিত ওই কার্গো থেকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কিছু সার অপসারণ করেছে, তবে তা পরিমাণে খুবই কম।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুন্দরবনে সারবাহী কার্গোডুবির ঘটনা তদন্তে মন্ত্রণালয় খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষককে আহ্বায়ক করে বুধবার ৭ সদস্যের একটি কমিটি করেছে।

কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দায়-দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নে সরেজমিনে তদন্ত করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন করে প্রতিনিধি।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ দত্ত বলেন, “এমওপি একটি রাসায়নিক সার। এটি পানিতে সহজে দ্রবীভূত হয়। বিপুল পরিমাণ এই সার একটি ছোট এলাকায় একসঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে জলজ প্রাণী ও সম্পদের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।”

সুন্দরবন একটি স্পর্শকাতর এলাকা। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জয়নুল আবেদীন বলেন, “এই সার কৃষি ও মৎস্য চাষে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে না।”