‘রাজনীতি কল্যাণের জন্য, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করবেন না’

দেশের সব শিশুর শিক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগাদা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 09:11 AM
Updated : 26 April 2015, 09:36 AM

স্নাতক ও সমমানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “কোনো শিশু যেন পড়াশুনার বাইরে না থাকে। সবার ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষতিসাধন করার মতো’ রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য। সেই রাজনীতি যখন মানুষের জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনে সেটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের। এটা রাজনৈতিক দলের নীতির ব্যাপার।

“দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করবো, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, মানুষ এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য। অপরদিকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে মানুষের ক্ষতি করা- এটা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সবার জন্য শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগে শুধু ছেলেদের বেশি করে পড়ানোর মানসিকতা ছিল। এখন এ ধরনের মানসিকতা কমে এসেছে।”

মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ভবিষ্যতে শিক্ষায় জেন্ডার সমতা আনতে হলে আরো বেশি করে ছাত্র ভর্তি করাতে হবে। কোনো শিশু পড়াশুনায় ফাঁকি দিচ্ছে কি না  সেটা আমাদের দেখতে হবে।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা প্রত্যেকটা স্কুলে স্কুলে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম’ করে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমিকভাবে সব স্কুলে করে দিব।

“শিক্ষাটাকে আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন ও প্রযুক্তি সম্পন্ন করে আমরা করব।”

মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ঠিক এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল অবরোধ দেওয়া হল, ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষার সিডিউল বার বার পরিবর্তন করতে হল। এতে পড়াশুনার মনও নষ্ট হয়ে যায়।”

স্কুলে যাওয়ার পথে হাতবোমা বিস্ফোরণে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী বিনু ও বগুড়ার সাদিয়া আক্তারের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এভাবে ককটেল মেরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর চোখটাই নষ্ট করে দিল। এসএসসি পরীক্ষা দেবে, সে পরীক্ষা দিতে পারল না।

“একটা বাচ্চার স্বপ্ন ছিল তার স্বপ্নটাই ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হল।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে  বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচিতে ৫৮২টি স্কুলে অগ্নিসংযোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়েরা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও  মেধার প্রমাণ রাখবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এদেশকে আমরা উন্নত করব। সীমিত সম্পদ দিয়েই আমরা পরিকল্পিতভাবে দেশকে গড়ে তুলতে পারি। সেটার প্রমাণ আমরা রেখেছি।”

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা পাওয়ায় যারা সমালোচনা করেছিলেন, তাদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমাদের বাংলাদেশের টাইগাররা দেখিয়ে দিয়েছে, তারা পারে।”

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজ ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পরাজিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটাকে আমি হোয়াইটওয়াশ বলব না, এটা বাংলাওয়াশ।”

শিক্ষর্থীদের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো কাজই কঠিন নয়, যদি বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়।”

দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়। এক হাজার কোটি টাকা ‘সিডমানি’ দিয়ে এ ট্রাস্টের কাজ শুরু করা হয়।

২০১২-২০১৩ অর্থবছরে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের এক লাখ ২৯ হাজার ৮১০ জন ছাত্রীকে ৭২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে এক লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৬ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ হাজার ৯৫৭ জন ছাত্র রয়েছে।

২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০১২-২০১৩ অর্থবছর পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের এক কোটি ৩৩ ল ৭০ হাজার শিক্ষার্থীকে দুই হাজার দুই’শো ৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বৃত্তিসহ অন্যান্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বক্তব্য দেন।