ভিডিও দেখে যৌন নিপীড়কদের চিহ্নিতের চেষ্টা

ভিডিও ফুটেজ দেখে বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2015, 07:06 PM
Updated : 17 April 2015, 03:48 AM

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়ে এই ঘটনার কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে আহ্বান জানিয়েছে সবার কাছে।

যৌন নিপীড়করা এখনও চিহ্নিত না হওয়ায় সেদিনের ঘটনা নিয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনা নিয়ে সারাদেশে নিন্দা-প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। এর মধ্যে হাই কোর্টের স্বতপ্রণোদিত এক রুলে দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এক মাসের মধ্যে হাই কোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।

বর্ষবরণের দিন সন্ধ্যায় টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে এক দল যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়। তাতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন।

অভিযোগ উঠেছে, সেদিন পুলিশ থাকলেও নারীদের ওপর হামলা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও পুলিশের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছে।

শাহবাগ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন।

বিকালে টিএসসি এলাকা পরিদর্শনে যান ডিএমপির রমনা জোনের উপকমিশনার আবদুল বাতেন ও সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান ও সহকারী উপকমিশনার ইব্রাহীম খান।

বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, নববর্ষের দিন এই এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। হাজার হাজার মানুষ ছিল, সেখানে পুলিশও তার দায়িত্ব পালন করে। যে ঘটনাটি ঘটেছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত চলছে।

“ঘটনাটির সিসিটিভি থেকে ফুটেজ নিয়েছি। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য কী, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “যারা এখানে প্রত্যক্ষদর্শী ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ প্রত্যেক স্তরের লোকের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যায় ওই ঘটনার সময় সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

“এক ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী বা কোনো পরিচিতমুখ পাওয়া যায়নি। তবে সবগুলো ফুটেজ এখনও দেখা শেষ হয়নি।”

নিপীড়কদের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ

তবে যে টুকু দেখেছেন, তাতে যৌন হয়রানির পরিকল্পিত কোনো ঘটনা নজরে আসেনি বলে দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর।

“আলোক স্বল্পতার কারণে ভিডিওগুলো ভালোমতো বোঝা যাচ্ছিল না। মানুষের এদিক-ওদিক যাওয়ার বিষয়ই বোঝা যাচ্ছিল। তবে কিছু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটতে ফুটেজে দেখা যায়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে লাঞ্ছিত করার মতো কোনো ঘটনা চোখে পড়েনি।”

সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনাটি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি তদন্তকাজ শুরু করেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে তথ্য চেয়ে বলা হয়েছে, “তদন্তের স্বার্থে এ সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীর প্রামাণিক কোনো তথ্য থাকলে তা কমিটির আহ্বায়ক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের দপ্তরে লিখিতভাবে আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে জমাদানের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”

সেদিন শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছিল কি না, আমজাদ আলী এখনও নিশ্চিত নন। তার মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যৌন হয়রানির ওই ঘটনাকে ‘কথিত’ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পদাধিকার বলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সমন্বয়ের বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিত থাকা আমজাদ আলী বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।

“পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও চলছিল, কিন্তু কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। যে পরিকল্পনা ছিল, তা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয়নি।”

অভিযোগ শুনে ক্ষিপ্ত পুলিশ

বইমেলা ঘিরে পুলিশ পাহারার মধ্যে দেড় মাস আগে যে স্থানে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়, একই স্থানে যৌন হয়রানির এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যৌন নিপীড়নের সময় পুলিশ থাকলেও তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো তাদের লাঠিপেটার স্বীকার নিরীহরাও হয়েছেন। জড়িত কয়েকজনকে ধরলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সাংবাদিকরা এসব অভিযোগ জানালে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

 

ঘটনাস্থলে দুজন পুলিশ ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করলেও কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পুলিশই ছিল। উপকমিশনার বাতেন বলেন, তিনি নিজেও বিকাল থেকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত টিএসসি এলাকার দায়িত্বে ছিলেন।

“নববর্ষের যে অনুষ্ঠান সেটা সারারাত চলার কথা নয়। বলা হয়েছিল যে ৫টার মধ্যে সবাই চলে যাবেন। আমরা ৫টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সবাইকে বেড়িয়ে যেতে বলেছিলাম।”

‘পর্যাপ্ত’ পুলিশের উপস্থিতির পর দেড় ঘণ্টা ধরে ‘বীভৎস’ ঘটনা কিভাবে ঘটল- এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নে বাতেন উত্তেজিত হয়ে বলেন, “এটাকে বীভৎসতার ঘটনা বলছেন, এ ঘটনার কি কোনো ডকুমেন্ট আছে বা কোনো ছবি আছে।

“আমাদের কাছে সিসিটিভি আছে, আমরা দেখছি। কিন্তু সেখানে এরকম বীভৎস ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে পারছি না। আপনাদের কারও কাছে কি কোনো ছবি বা ডকুমেন্ট আছে? তা হলে আমরা দেখলেই বুঝতে পারতাম।”

বাতেন দাবি করেন, পুলিশই লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জড়িতদের মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশে দেওয়া হলেও ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “যদি পুলিশের কাছে সত্যি সত্যি দিয়ে থাকেন, যারা দিয়েছেন তাদের বলতে হবে, কাদের কাছে দিয়েছেন।”

পুলিশের এএসআই আশরাফের কাছে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হলে উপকমিশনার বাতেন বলেন, “তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আশরাফ বলেছে, তখন সে লাঠিপেটায় ব্যস্ত ছিল।”

“যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে প্লিজ আমাদেকে জানান, ব্যবস্থা নেব,” বলেন এই কর্মকর্তা।