বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানিতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।
Published : 15 Apr 2015, 03:09 PM
পুলিশের নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি অভিযোগ করে তারও তদন্ত দাবি করেছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মঙ্গলবারের যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘নির্লিপ্ত’ রয়েছে।
তার আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে যৌন নিপীড়কদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি তোলেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
বিকালে ‘বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ’র পক্ষে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে এক সমাবেশ থেকে যৌন নিপীড়কদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিনসহ প্রতিবাদকারীরা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আগের দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হন কয়েকজন নারী।
নারীদের ওপর হামলা ঠেকাতে গিয়ে একদল যুবকের হামলায় হাত ভেঙে যায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দীর।
টিএসসির সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটের বাইরে যেখানে নারীদের ওপর এই হামলা হয়, সেখান থেকে কয়েক গজ দূরেই গত ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারান লেখক অভিজিৎ রায়।
সে সময়ও সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছিলেন অভিজিতের স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম জিলানী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও মিলন চত্বরে পুলিশের অবস্থানের কাছাকাছি জায়গায় এই ঘটনা ঘটে, যেখানে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও সিসি ক্যামেরা ছিল। তারপরেও পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে টালবাহানা করছে। আমরা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “সমগ্র জাতি যখন নববর্ষকে বরণ করে নিচ্ছে তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টিএসসিমুখী গেইটে ১৫-২০ জন নারীর ওপর বর্বর হামলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দায়সারা বক্তব্য দিয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
“পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি দেখায়, যা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তোলে।”
ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, বর্ষবরণ উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আগের দিন তারা ক্যাম্পাসে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং ফুটপাতে দোকান বসতে না দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলেন।
“কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি, পহেলা বৈশাখে দুপুরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলো দিয়ে অবাধে গাড়ি চলতে ও ফুটপাতে দোকানপাট বসতে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ জনসাধারণের চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে।”
হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে ধাক্কায় হাত ভেঙেছে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দীর। নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে আক্রান্ত নারীর শরীরে জড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে মিছিলে আসা লিটন বলেন, “গতকাল ক্যাম্পাসে যে বর্বরতা ঘটেছে তাতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করছি।
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যে নির্লিপ্ততা দেখা গেছে তারও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান তারেক, সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তম্ময়, দপ্তর সম্পাদক আল আমিন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।