বর্ষবরণ উৎসবে যৌন হয়রানি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন কয়েকজন নারী।

ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2015, 06:47 PM
Updated : 15 April 2015, 06:36 AM

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারীদের ওপর এই হামলা ঠেকাতে গিয়ে একদল যুবকের হামলায় হাত ভেঙেছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি।

যৌন হয়রানির এ ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী পুলিশের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন।

তবে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের দাবি, তারা তৎপর থাকলেও ‘বিচ্ছিন্ন’ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তারা অপরাধীদের সনাক্ত করে আটকের চেষ্টা করছেন।

বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে মঙ্গলবার দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, তাতে সারা ঢাকা থেকে অনেকে যোগ দিয়েছিলেন।

এর মধ্যেই সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সংঘবদ্ধ একদল যুবক নারীদের যৌন হয়রানি করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

তারা বলেন, টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে কয়েকজন নারীর ‘শ্লীলতাহানির’ চেষ্টা চালায় ৩০-৩৫ জনের ওই যুবকের দল। তারা কারও কারও শাড়ি ধরেও টান দিয়েছিল। তখন পুলিশ কয়েক দফা লাঠিপেটা করলেও ভিড়ের মধ্যে ওই যুবকদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।

ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে যখন সবাই বের হচ্ছিল, তখন গেইটে থাকা বহিরাগত ওই যুবকরা নারীদের যৌন হয়রানি করে।

“২০-২৫ জন যুবক এক নারীর শ্লীলতাহানি ঘটানোর সময় বাঁচতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করতে গেলে ওই যুবকরা আমার ওপর চড়াও হয়। তাদের ধাক্কাধাক্কিতে আমিও পড়ে যাই।”

পড়ে গিয়ে ডান হাত ভেঙে গেছে লিটন নন্দীর। তবে ওই নারীকে উদ্ধার করে নিজের পাঞ্জাবি জড়িয়ে দিয়েছেন লিটন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।

ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্রজোট নারীদের ওপর হামলার নিন্দা এবং এতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে।  

ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের ঘটনার কথা শুনেছি, বেশ কয়েকজনের শ্লীলতাহানি হয়েছে। পুলিশকে বলেছি, জড়িতদের খুঁজে বের করতে।”

“বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশকে বলেছিলাম, বিকাল ৪টার মধ্যে উদ্যানের গেইট বন্ধ করে দিতে। কিন্তু সেটা করা হয়নি।”

শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাঠিচার্জ করেও যুবকদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।”

এ ঘটনায় জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উত্ত্যক্ততা জগন্নাথেও

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পিটিয়েছে ছাত্ররা। তবে উত্ত্যক্তকারীর ছবি তোলায় লাঞ্ছিত হয়েছেন এক সাংবাদিক।

মঙ্গলবার বিকালে ক্যাম্পাসের বৈশাখী অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস উত্তরণ ও অনির্বাণে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

উত্ত্যক্ততার জন্য মারধরের শিকার ছাত্রলীগকর্মী নাজমুল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার ছবি তুলতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন বাংলা ট্রিবিউনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রোহান।

বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুরঞ্জনের সঙ্গে থাকা সংগঠনের কয়েকজন কর্মী উত্তরণ বাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছিল। চানখারপুলে এলে সবাই মিলে নাজমুলসহ কয়েকজনকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।

মারধর করা হচ্ছে নাজমুলকে

উত্তরণ বাসের পেছনে থাকা অনির্বাণে ছিলেন রোহান। তিনি নেমে ঘটনার ছবি তুললে নাজমুলসহ কয়েকজন তার ওপর চড়াও হয়।

রোহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলাউদ্দিন, চঞ্চল ও নাজমুল আমার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবিগুলো মুছে দেয়।  তারা আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে।”

এই বিষয়ে সুরঞ্জন বলেন, “নাজমুল নামের ছেলেটিকে আমি চিনি না। তবে আলাউদ্দিন এবং চঞ্চল আমার কর্মী। ছাত্রীদের ইভটিজিং করা এবং সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। এ বিষয়ে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নেবে।