যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের লাশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সরাসরি নেওয়া হবে শেরপুরে, সেখানে পৈত্রিক এলাকায় তার দাফনের প্রস্তুতি নিয়েছে পরিবার।
Published : 11 Apr 2015, 10:58 PM
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কামারুজ্জামানকে শনিবার রাত ১০টার পরপরই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে থাকা চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, র্যাব ও পুলিশের নয়টি গাড়ির পাহারায় লাশ নিয়ে যাওয়া হবে শেরপুরে।
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে কামারুজ্জামানের বড় ভাই কফিল উদ্দিন কবরের এই জায়গাটি ঠিক করেন। তিনি বলেন, এখানে দাফনের ইচ্ছা জানিয়েছিলেন তার ভাই।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর রাত সাড়ে ১০টায় কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয় বলে সদর থানার ওসি মাজহারুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
এর আগে সন্ধ্যা থেকে ওই এলাকায় কেবল টেলিভিশনের সংযোগ বন্ধ ছিল। সেখানে পুলিশের অবস্থানও রয়েছে।
স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান থাকতেন ঢাকার মিরপুরের সাংবাদিক কলোনিতে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে বুধবার বিকাল থেকে বাজিতখিলার ওই জমিতে কবরের কাজ চলছিল। দাফনের পর কবর বাঁধানোর জন্য ইট ও বালুও এনে রাখা হয়।
তখন এই যুদ্ধাপরাধীকে কবরের জায়গা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা, যার মধ্যে কামারুজ্জামানের স্ত্রীর এক ভাইও ছিলেন।
তবে পরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনার পর তারা কামারুজ্জামানের লাশ প্রতিরোধের ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
একাত্তরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর বাহিনীর প্রধান কামারুজ্জামানকে যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে শতাধিক মানুষকে হত্যা।
একাত্তরে ওই গণহত্যার পর সোহাগপুরের অধিকাংশ নারীকে অকালে বৈধব্য নিতে হওয়ায় গ্রামটি বিধবাপল্লী হিসেবে পরিচিতি পায়।
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিলের রায় দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ আদালত একাত্তরে এই জামায়াত নেতার ভূমিকাকে জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে।
তবে তার ভাই কফিল উদ্দিনের দাবি, রাজনৈতিক কারণে কামারুজ্জামানকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে।
কফিল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে কামারুজ্জামানের লাশ হস্তান্তর এবং জানাজার নামাজ ও কবর দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অনুমতি নিয়েছেন তারা।
এদিকে কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের আগে থেকে শেরপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
র্যাবের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য শেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে।
শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকায় জামায়াত কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবু সালেহ নুরুল ইসলাম হিরু সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা রোববার বিজয় মিছিল করবেন।