এনবিআরে গিয়ে কথা বললেন ইউনূসের আইনজীবীরা

‘বকেয়া কর’ নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এর চিঠি পেয়ে নির্ধারিত দিনে আলোচনা করতে গেছেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 02:41 PM
Updated : 29 March 2015, 02:41 PM

ইউনূস বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করায় রোববার রুহুল আমিন সরকারের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল কর অঞ্চল-৬ এর কমিশনারের কাছে যান।

রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “ড. ইউনূস দেশের বাইরে থাকায় আমরা আলোচনার জন্য গিয়েছিলাম। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় আলোচনার বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।”

আলোচনায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিষ্পত্তির বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না। ব্যাপারটি যেমন আদালতে রয়েছে তেমনি আলোচনাও চলছে। আগামী মাসের ১৩ তারিখে পুনরায় আলোচনার তারিখ রয়েছে।

প্রায় ১৪ কোটি টাকা বকেয়া কর আদায়ের জন্য আলোচনায় বসতে নোবেলজয়ী ইউনূসকে এনবিআরের কর অঞ্চল-৬ থেকে সম্প্রতি ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

রোববারের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অঞ্চল-৬ এর কমিশনার মেফতাহ উদ্দিন।

এ বিষয়ে কিছু জানার থাকলে ইউনূস সেন্টারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে এর আগে চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানাতে যোগাযোগ করা হলে মেফতাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “উনার কিছু কর বকেয়া রয়েছে। এ নিয়ে উনি আদালতেও গেছেন। আমরা চাচ্ছি আলোচনা করে সমাধান করতে। সেজন্যই উনাকে দাওয়াত করা হয়েছে।”

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ‘শান্তি স্থাপনে’ ভূমিকা রাখায় ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।

২০১০ সালে নরওয়ের জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ উঠলে দেশে-বিদেশে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।

গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে তাকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদালতে গেলেও ওই পদে তিনি আর ফিরতে পারেননি।

ফাইল ছবি

যে কর নিয়ে এখন দর কষাকষি চলছে, তা ইউনূসের ব্যক্তিগত কর বলে জানায় এনবিআর।

সংশ্লিষ্ট সার্কেলের কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনূসের বকেয়া করের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এটি নিয়মিত কর নয়; বরং তার দান কর।

দান কর হচ্ছে কোনো ব্যক্তির আয়কর পরিশোধ করার পর যে অর্থ থাকে সেই অর্থ যদি দান করেন তাহলে সেই দানের ওপর কর দিতে হয়। এই কর আদায়ে দানকর আইন-১৯৯০ রয়েছে।

তবে আইনের কয়েকটি ধারায় দান করা অর্থের ওপর কর আরোপ না করার কথাও রয়েছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে গত ৫ মার্চ হাইকোর্টে এ বিষয়ে একটি রেফারেন্স মামলা হয়েছে।

মেফতাহ উদ্দিন জানান, “এই কর রেয়াত পাওয়ার জন্য প্রথমে উনি কমিশনারেটে আপিল করেছিলেন। কিন্তু কমিশনারেট ওনার আপিল রক্ষা করেনি। পরে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন, সেখানেও উনার ওপর কর ধার্য করা হয়। এরপর কিছু কর দিয়ে উনি উচ্চ আদালতে গেছেন বলে আমরা জেনেছি।

“উচ্চ আদালত উনার পক্ষে রায় দিলে আমরা অবশ্যই উনি যে অর্থ জমা দিয়েছেন তা ফেরত দেব।”

এই কর আদায়ে গত তিনটি অর্থবছর ধরে (২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪) নোবেলজয়ীকে তাগাদা দিয়ে আসছে এনবিআর।

এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর বিষয়ক যে কোনো সমস্যা সমাধানে কর কমিশনারদের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া আছে। করদাতাদের সঙ্গে আলোচনা বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ- সবই তারা নিতে পারেন। ড. ইউনূস একজন সম্মানিত করদাতা। উনার কর বিষয়ক কোনো জটিলতা থাকলে তা সমাধানের জন্য কমিশনার অবশ্যই আলোচনায় বসার অনুরোধ জানাতে পারেন।”