বকেয়া আদায়ে ইউনূসকে এনবিআরের ‘দাওয়াত’

প্রায় ১৪ কোটি টাকা বকেয়া কর আদায়ের জন্য নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে ডেকেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2015, 01:12 PM
Updated : 2 April 2015, 03:41 PM

এনবিআরের কর অঞ্চল-৬ এর ১৪৪ নম্বর সার্কেল থেকে সম্প্রতি ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যাতে আগামী ২৯ মার্চ তাকে কর কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অনুরোধ করা হয়েছে।

কর অঞ্চল-৬ এর কমিশনার মেফতাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশেষ কিছু নয়। উনি একজন সম্মানিত করদাতা। উনার কিছু কর বকেয়া রয়েছে। এ নিয়ে উনি আদালতেও গেছেন। আমরা চাচ্ছি আলোচনা করে সমাধান করতে। সেজন্যই উনাকে দাওয়াত করা হয়েছে।”

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ‘শান্তি স্থাপনে’ ভূমিকা রাখায় ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।

২০১০ সালে নরওয়ের জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ উঠলে দেশে-বিদেশে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।

গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে তাকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদালতে গেলেও ওই পদ তিনি আর ফিরে পাননি।

মেফতাহ উদ্দিন জানান, ড. ইউনূসের যে কর বকেয়া রয়েছে তা তার ব্যক্তিগত কর।

তিনি বকেয়ার পরিমাণ বলতে না চাইলেও সংশ্লিস্ট সার্কেলের কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনূসের বকেয়া করের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

মেফতাহ উদ্দিন বলেন,“যে বকেয়া কর আদায়ের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসকে ডাকা হয়েছে সেটি ওনার আয়কর নয়। এটি এই অর্থনীতিবিদের ‘দান কর’।”

দান কর হচ্ছে কোন ব্যক্তির আয়কর পরিশোধ করার পর যে অর্থ থাকে সেই অর্থ যদি দান করেন তাহলে সেই দানের ওপর কর দিতে হয়।

এই কর আদায়ে দানকর আইন-১৯৯০ রয়েছে।

তবে আইনের কয়েকটি ধারায় দান করা অর্থের ওপর কর আরোপ না করার কথাও রয়েছে।

মেফতাহ উদ্দিন বলেন,“এটি সেটেলড যে উনি যেসব জায়গায় দান করেছেন সেগুলো কর রেয়াত পাবেন না। কিন্তু উনি সেটি মনে করেন না। এজন্য সবশেষে হাইকোর্টে গেছেন।”

মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে গত ৫ মার্চ হাইকোর্টে এ বিষয়ে একটি রেফারেন্স মামলা হয়েছে।

মেফতাহ উদ্দিন বলেন,“এই কর রেয়াত পাওয়ার জন্য প্রথমে উনি কমিশনারেটে আপিল করেছিলেন। কিন্তু কমিশনারেট ওনার আপিল রক্ষা করেনি। পরে ট্রাইবুনালে মামলা করেছিলেন, সেখানেও উনার ওপর কর ধার‌্য করা হয়। এরপর কিছু কর দিয়ে উনি উচ্চ আদালতে গেছেন বলে আমরা জেনেছি।

“উচ্চ আদালত উনার পক্ষে রায় দিলে আমরা অবশ্যই উনি যে অর্থ জমা দিয়েছেন তা ফেরত দেবো।” 

এই কর আদায়ে গত তিনটি অর্থবছর ধরে (২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪) নোবেলজয়ীকে তাগাদা দিয়ে আসছে এনবিআর। 

এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর বিষয়ক যে কোনো সমস্যা সমাধানে কর কমিশনারদের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া আছে। করদাতাদের সঙ্গে আলোচনা বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ- সবই তারা নিতে পারেন। ড. ইউনূস একজন সম্মানিত করদাতা। উনার কর বিষয়ক কোনো জটিলতা থাকলে তা সমাধানের জন্য কমিশনার অবশ্যই আলোচনায় বসার অনুরোধ জানাতে পারেন।”

এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ড. ইউনূস বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। এনবিআরের চিঠির বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে শিগগিরই একটি বিবৃতি দেওয়া হবে।